সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পক্ষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বলা ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার-রাজাকার’ স্লোগানের নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নেতারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং রাজাকারদের পক্ষাবলম্বনকারী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে দেশবাসীকে আহ্বান এবং সরকারকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিকৃত করে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পক্ষে আন্দোলনকারী একদল শিক্ষার্থী যেভাবে গত রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার-রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়েছে, তা আমাদের ব্যথিত, লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই স্লোগান প্রদানের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে। অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে দুই থেকে ছয় লক্ষ নির্যাতিত নারীর প্রতি।’
রাজাকারদের পক্ষাবলম্বন শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে না উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ভূমি- যা বাংলাদেশের মহান মুক্তিসংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদের রক্তে রঞ্জিত এবং যে বিশ্ববিদ্যালয় মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে; সেই স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন পরিচালনাকারী রাজাকারের পক্ষে স্লোগান প্রদানের তীব্র নিন্দা জানাই। কোনো অজুহাতেই রাজাকারের পক্ষাবলম্বন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অবমাননা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ গ্রহণ করবে না।’
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘কোটা বাতিলকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করার প্রয়াস রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানাই।’
প্রসঙ্গত, রোববার (১৪ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না। এই বক্তব্যের প্রতিবাদেই সেদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ মিছিল নিয়ে বের হন।