31 C
Dhaka
Wednesday, October 30, 2024

‘হামার ভুল হচে ছেলেটাক বিশ্ববিদ্যালয়োত লেখাপড়া করিবার দিয়া’

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের (২৪) পরিবার এখন শোকে স্তব্ধ। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ। সাঈদের এমন মৃত্যুতে পরিবারসহ পুরো গ্রামে চলছে শোকের মাতম।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে এই সংঘর্ষ হয়। সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেন ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে।

আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারে কান্নার রোল পড়ে যায়। তার ছোট বোন সুমির আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। অশ্রুসিক্ত সুমি বলেন, ‘হামার ভাইয়োক ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার স্বপ্ন পুরণ হলো হয়। ও ভাই হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে।’

আরো পড়ুন  ‘৪৮ ঘণ্টায় ৩৫ শিশু নিখোঁজ’, যা বলছে পুলিশ

ছেলেকে হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলছিলেন, ‘হামার ভুল হচে ছেলেটাক বিশ্ববিদ্যালয়োত লেখাপড়া করিবার দিয়া। তুই হামাক ক্ষমা করি দেরে বাবা। তোক নিয়্যা হামার অনেক স্বপ্ন আছিলো।’

নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাঈদ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মার। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। চমৎকার আচার-ব্যবহারের কারণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিল সাঈদ।

আরো পড়ুন  রংপুর পার্ক মোড়ের নাম ‌‘আবু সাঈদ চত্বর’ দিলেন শিক্ষার্থীরা

মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে পু‌লিশের সঙ্গে সংঘ‌র্ষের সময় নিহত হন আবু সাঈদ। দিবাগত রাত দুইটার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ তার গ্রামে এসে পৌঁছে। এলাকার শত শত মানুষ একনজর দেখার জন্য আবু সাঈদের বাড়িতে অপেক্ষমাণ ছিল। মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে যায়।

আজ বুধবার সকাল ৯টায় রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মানুষের ঢল নামে। জানাজায় ইমামতি করেন, আবু সাঈদের আত্মীয় মো. সিয়াম মিয়া। পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হোন আবু সাঈদ।

আরো পড়ুন  ঢাবিতে সংঘর্ষে কোটা আন্দোলনকারী শতাধিক শিক্ষার্থী আহত

জানা গেছে, ওই মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সংঘর্ষে নিহত হন আবু সাঈদ।

সর্বশেষ সংবাদ