ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর আড়াইটার পর থেকে ঢাবি ক্যাম্পাসের কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্রলীগের ধাওয়ার পর ক্যাম্পাসজুড়ে আন্দোলনকারীদের মাথায় ও হাতে থাকা দেশের পতাকা এখন ধূলায় লুটাচ্ছে। ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিক্ষার্থীদের জুতা।
আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ব্যাগ-মোবাইল হারিয়েছে অনেকের।
তাদের অভিযোগ, খুঁজে খুঁজে কোটা আন্দোলনকারীদের পেটাচ্ছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের কাউকে পেলে সংঘবদ্ধভাবে পেটানো হচ্ছে তাদের।
এদিকে লাঠিসোঁটা, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক, বেসবল ব্যাট নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে শোডাউন দিতে দেখা গেছে। দফায় দফায় মিছিল করছেন তারা। কোটা আন্দোলনকারীরা যাতে পলাশী বা নীলক্ষেত থেকে ফিরে আসতে না পারে তাই ফুলার রোডে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
এরআগে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১টার দিকে তারা অবস্থান নেয়া শুরু করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে যোগ দেন।
একই সঙ্গে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আজ থেকে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা-দেশটা কারো বাপের না’, ‘তুমি নও আমি নই-রাজাকার রাজাকার’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার-তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘এসো ভাই এসো বোন-গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’ স্লোগান দেন।
এর আগে রোববার (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বিক্ষোভ হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে আবার বিক্ষোভ ডাকেন তারা।
এর আগে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।
গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। পরে ১০ জুলাই হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ।
এর আগে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এদিকে আদালতের রায়ের পর গত ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। সারা দেশে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ রাস্তা অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।