২০১৪ সালের ৪ আগস্ট পদ্মা নদীতে স্মরণকালের ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনায় প্রায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামে একটি লঞ্চ। সরকারী হিসেবে, এতে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৬৪ জন। এ ঘটনায় দুটো মামলা হলেও বিচার হয়নি আজও। ফলে ক্ষোভ রয়েছে নিহত ও আহতের পরিবারে। এমনই একজন মাদারীপুরের রিজিয়া বেগম।
সরেজিমনে গিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট আজকের এই দিনে পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবে যায়। যার কথা মনে পড়লে আজও ভয়ে গা শিউরে উঠে স্বজনদের। জেলার শিবচর উপজেলার পাচ্চর ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা এলাকায় রিজিয়া বেগমের কথাই ধরা যাক। পদ্মায় সলিল সমাধি হয়েছিল তার পরিবারের চার জনের। বড় ছেলে, ছেলের বউ আর দুই সন্তান মারা যায়। তিনজনের মরদেহ মিললেও পাওয়া যায়নি বড় নাতনির লাশ। বৃদ্ধা বয়সে এসে তার একটি আপেক্ষ, বিচার কি দেখে যেতে পারবেন তিনি।
রিজিয়া বেগম জানান, এখন চোখে দেখতে পাই না। আমার বড় পোলা, পোলার বউ আর ছোট নাতির লাশ পাইছি। কিন্তু বড় নাতির লাশ পাই নাই। আর কোন দিন পাবোও না। আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে। এখন কেউ কামাই করার নেই। চেয়ারম্যান একটা ভাতার কার্ড দিছে, সেটা দিয়েই মাস চলতে হয়। বাকি দিন কিভাবে চলবো জানি না। তবে যাদের কারণে আমার সংসার শেষ হইয়া গেলো, তাদের নাকি এখনো শাস্তি হয় না।
সরকারী হিসেব মতে, পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবিতে ৪৯ জনের লাশ বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার করে শিবচরের পাঁচ্চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। নিখোঁজ হন ৬৪ জন। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনকে শিবচরের পৌর কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। রেখে দেয়া হয় ২১ জনের ডিএনএ টেস্টেও নমুনা। তবে এখনো কেউ শনাক্ত করতে আসেনি লাশগুলোর।
এ ব্যাপারে শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান জানান, ওই সময় যে ২১টি মরদেহ দাফন করা হয়েছিল, তা এখনো কেউ শনাক্তের জন্যে আসেনি। ডিএনএ টেস্টের নমুনা আছে, যদি কেউ শনাক্তের জন্যে আসে, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে, ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। পলাতক চার আসামির পরোয়ানা এখনো তামিল হয়নি। বিচারের জন্য ১৩ বার দিন ধার্য হলেও বাদী তৎকালীন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ ছাড়া মামলার ৩০ স্বাক্ষীর কেউই সাক্ষ্য দেননি। স্বাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানাও কার্যকর হয়নি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে মুন্সীগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল মতিন জানান, সাক্ষী না আসায় আমরা মামলার কোনো কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছি না। পুলিশ গিয়ে আসামিদের খুঁজে পায় না। বিষয়টি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। কেননা অন্যান্য মামলায় সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন।