ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছেড়ে ভারতের আগরতলায় গিয়ে পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা। সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এ সময় সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা তার ছোট বোনকে নিয়ে গণভবন থেকে নিরাপদে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সুযোগ না হওয়ায় আগেই দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
এদিকে সংকটকালে দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সোমবার (৫ আগস্ট ) বিকেল চারটার দিকে জাতির উদ্দেশ্য দেয়া এক ভাষণে এ কথা জানান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। আর সেনাবাহিনী দেশের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেন।
সাবেক এ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, আজ দেশে যা হলো, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। কখনো গণ-অভ্যুত্থান ঠেকানো যায় না। সহজেই শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যু সমাধান করা যেত। কিন্তু শেখ হাসিনার জেদের জন্য দেশের এত মানুষের মৃত্যু হলো।
সংবাদমাধ্যমে প্রাণহানির যেসব চিত্র ফুটে উঠেছে, সেই সংখ্যা বাস্তবে অনেক বেশি। কোথায় কত মরদেহ পড়ে আছে, কত গণকবর হয়েছে, কত নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখন তিনি তো চলে গেলেন। এসবের জবাব এখন কে দেবে? গত ১৫ বছর দেশের মানুষ কোনো ভোট দিতে পারেননি। দিনের পর দিন ভোট চুরি করা হয়েছে। এবার পুঞ্জীভূত থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রকাশ হয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার অবশ্যই বোঝা উচিত ছিল, দেশের মানুষের কাছে তিনি ও তার দল কতটা অপছন্দনীয়। এত যে প্রাণহানি হলো, এর জবাব এখন কে দেবে? সুশাসনের প্রচুর অভাব। সে কখনোই সুশাসন দিতে পারেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে তাদের ওপর হাজার হাজার গুলি ছোড়া হয়েছে। আবার শিক্ষার্থীদের ওপর হেলিকপ্টার দিয়ে উপর থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই এর আগে এইচ এম এরশাদকে স্বৈরাচর বলেছি। ওই সময় কিন্তু মাত্র ছয়জন মানুষের মৃত্যু হওয়ায় স্বৈরশাসক বলছি তাকে। কিন্তু গত ১৫ বছরে দেশের কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে! ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা হলো। তাতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু হলো। এর জবাব কে দেবে?
এ নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, বঙ্গবন্ধু, যাকে জাতির পিতা বলা হয়, সেই পরিবারের সদস্যদের কী কারণে এমন করুণ পরিণতি হবে? অথচ এমন করুণ পরিণতি দেখতে হলো আমাদের। যা শুধুই তার দম্ভ ও অহমিকার জন্য হয়েছে।
তিনি বলেন, তাকে বলেছি, সুশাসন নিশ্চিত করেন আপনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলেছি। যা হচ্ছে তা কিন্তু স্বৈরতন্ত্র। আর এসব বলার জন্য ভিন্ন দলের এজেন্ট বলা হতো আমাদের। এই যে এখন গণভবন লুটপাট করা হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে, এ জন্য কীভাবে জনগণকে দোষ দেবেন?
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নেয়নি। তিনি তিউনিসিয়া থেকেও শিক্ষা নেয়নি। মিসরে হোসনে মোবারক জনরোষের মুখে পড়ে কীভাবে উড়ে গেছে, সেখান থেকেও শিক্ষা নেয়নি শেখ হাসিনার সরকার। আসলে সরকার যদি জনগণের না হয় তাহলে পরিণতি এমনই হয়।
সবশেষ সাবেক এ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, এইচ এম এরশাদের থেকে ১০০ গুণ বেশি খারাপ হয়ে বিদায় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরশাদ কিন্তু দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। কিন্তু শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তিনি পালালেন আর আওয়ামী লীগ দলকে ধ্বংস করে গেলেন। আসলে শেখ হাসিনার দম্ভ, হিংসা, অহংকার ধ্বংস করল দলটিকে।