ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সেই আলোচনায় সমন্বয়কদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনার পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, ‘আজকের আলোচনায় নাহিদ, সারজিস, বাকেরসহ সমন্বয়কদের যে ম্যাচুরিটি দেখেছি সেটা মুগ্ধ করার মতো। আমরা খুবই লাকি যে আমরা শুধু অভ্যুত্থানের নেতা পাইনি, আমার মনে হয় আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি।’
ঢাবির আইন বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কারা থাকছেন তালিকা এখনই প্রকাশ করা হবে না। সংখ্যাটা কত হবে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা একটি এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশনে এই সরকার গঠন করতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে এই সরকারকে বৈধতা দেওয়ার বিভিন্ন সাংবিধানিক রীতি আছে, যে নিয়ম আছে সেটি ফলো করা হবে।
বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হলে রাষ্ট্রপতি তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সংকট উত্তরণে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা জরুরি। উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন। এছাড়া তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরামর্শ দেন।
সংকট থেকে উত্তরণে দেশবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়ক।
সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা সরকার দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালালে পরবর্তীতে তা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। পরদিন মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সরকার ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।