20 C
Dhaka
Tuesday, December 3, 2024

ধানমন্ডিতে হেনস্তার শিকার সেই ব্যক্তি বললেন আমি জীবিত আছি

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে ১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে হেনস্তার শিকার ওই ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার ঘটনা সত্য নয়। তার মৃত্যুর খবর নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

হেনস্তার শিকার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল কুদ্দুস মাখন। তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকায়।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবদুল কুদ্দুস মাখন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিবছর শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২-এ তার বাসভবনে যাই। গতকাল সকালে আমি আমার বাসা থেকে বের হয়ে ধানমন্ডি ৩২-এ গেলে আমার ওপর তারা হামলা করে এবং অনেক মারধর করে। আমি বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক। বর্তমানে আমার কোনো পদবি নেই। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ নামে একটি সংগঠন করেছিলাম। আমরা এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে স্মৃতিচারণ করতাম। আমি ওই সংগঠনের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলাম, পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ৯০-র দশকে ময়মনসিংহ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। এটা আমাকে দিয়েছিলেন আলহাজ মতিউর রহমান প্রিন্সিপাল। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির লালন করি। আমাকে যারা গতকাল লাঞ্ছিত করেছে আল্লাহ সবার সঠিক বিচার করবেন। আর আমি জীবিত আছি, ভালো আছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

আরো পড়ুন  মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার ২

এর আগে মৃত্যুর গুজব নিয়ে তার বড় ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে তিনি লিখেন, ‘ভিডিওতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন, উনার নাম আবদুল কুদ্দুস মাখন। আমি উনার বড় ছেলে সিরাজ উল কুদ্দুস ইমরান। আমার বাবা মারা যায়নি, এটা গুজব। আমার বাবা জীবিত আছেন, এখন পর্যন্ত অনেকটাই সুস্থ আছেন। তাকে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে তার মোবাইল ও সব টাকা নিয়ে গেছে। বাসায় তার চিকিৎসা চলছে। এখন আপনাদের যদি মনে হয় তাকে মেরে ফেলবেন তাহলে বাসায় আসতে পারেন। আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে পারেন। আমাদের পরিবারের সবাই মরার জন্য প্রস্তুত। তার অপরাধ কি ছিল জানেন? স্বাধীনতার সময় তার, তার বাবা ও তার বোনের অংশগ্রহণ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে মিথ্যা মামলায় ৭ মাস ২৪ দিন জেল খাটা, তার অন্য অপরাধ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া, কালো পাঞ্জাবি পরিধান করা এবং বাংলাদেশের পতাকার টুপি পরিধান করা (একটা কথা আপনাদের অবগতির জন্য বলে রাখা ভালো উনার মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য উনি কখনো চেষ্টাই করেন নাই, কারণ আমার বাবা সার্টিফিকেটের জন্য অংশগ্রহণ করেন নাই)। এই যদি তার অপরাধ হয় তাহলে রাষ্ট্র আমাদের পুরো পরিবারকে ফাঁসি দিতে পারেন।’

আরো পড়ুন  ‘সরকারি কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশে কেউ গরিব থাকবে না’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে এই জঘন্য কাজের পরও আমাদের দেশের মানুষ থেমে যায়নি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আমার মেজো চাচাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাকে জবাই করবে। এই সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে আর বিচার চাওয়ার কিছু নেই। লাভও হবে না। বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেকে হয়ত কখনো পরিচয় দিতে পারব না। যারা আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন, আব্বা কিছুটা সুস্থ হলে আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেব। তবে অন্য কারও বাবার সঙ্গে যেন এমন অন্যায় না হয় আপনাদের কাছে এই অনুরোধ রইলো। আমার বাবার মতো অনেকেই আছেন যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন, কারণ তারা ৭১ দেখেছেন। এই অপরাধের জন্য দয়া করে আর কাউকে লাঞ্ছিত করবেন না প্লিজ।’

আরো পড়ুন  সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা, পাল্টা গুলিতে আহত ২

আমার ছেলের মরদেহ ফেরত দেন, আমি দেখব
বাবার লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে মামলা করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে সিরাজ উল কুদ্দুস ইমরান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন যে পরিস্থিতি এই পরিস্থিতিতে কোথাও সঠিক বিচার পাওয়া যাবে না। তাই এখন মামলা করে কোনো লাভ নেই। আমাদের একটাই কথা আমার বাবা যেমন লাঞ্ছিত হয়েছে আর কেউ যাতে এরকম লাঞ্ছিত না হয়। দেশবাসীর কাছে আমার বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া চাই। আরেকটি বিষয়, আমার বাবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। দয়া করে এ বিষয়টি আপনারা (সাংবাদিক) তুলে ধরবেন।

আবদুল কুদ্দুস মাখন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বরেণ্য রাজনীতিবিদ কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশার সঙ্গে রাজনীতি করতেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল কুদ্দুস মাখন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা আর আমি একসঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমাকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। তিনি আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। তিনি নালিতাবাড়ীর বিষয় দেখতেন আর আমি নকলার বিষয় দেখতাম।

সর্বশেষ সংবাদ