27 C
Dhaka
Tuesday, September 17, 2024

মারা গেলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত আরও ৪ জন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক আইনজীবীসহ ৪ জন মারা গেছেন। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মরদেহ ৪টির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর স্বজনদের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়।

তারা হলেন: কুমিল্লা সদর উপজেলার আইনজীবী আবুল কালাম (৫৫), চুয়াডাঙ্গার রাজমিস্ত্রী উজ্জ্বল হোসেন (৩০), নোয়াখালীর দোকান কর্মচারী আসিফ (২৬) ও বরগুনার ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যান আল আমিন হোসেন (২৭)।

নিহত আইনজীবী আবুল কালামের বাড়ির চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। তবে থাকতেন কুমিল্লা সদর উপজেলার মহিলা কলেজ রোডে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকিব নূর উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন আবুল কালাম। কুমিল্লা সদর থানার পাশে কুমিল্লা হাই স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় মুঘলটুলি সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তার বাহিনী আবুল কালামের ওপর হামলা করে এবং তাকে গুলিবিদ্ধ করে। ওইদিনই তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ৬ আগস্ট তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান তিনি।

আরো পড়ুন  ‘রাগের মাথায়’ গাড়িচাপা দিয়ে দারোয়ানকে হত্যা করলেন বাড়ির মালিক!

এদিকে নিহত উজ্জ্বল হোসাইনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আলতাফ হোসাইন। তার স্ত্রী শিলু আক্তার জানান, পেশায় রাজমিস্ত্রি উজ্জ্বল। ৫ আগস্ট কাজ থেকে বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন মুক্তারপুর মোল্লাবাজারে চা পান করতে। সরকারের পদত্যাগের সেইদিন বাজারের একটি হার্ডওয়ারের দোকানে আন্দোলনকারী আগুন লাগিয়ে দেয়। ওই দোকানটিতে বসে ছিলেন উজ্জ্বলসহ এলাকার বেশ কিছু লোকজন। সঙ্গে সঙ্গে দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে উজ্জ্বলসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত ও দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের পুরাতন বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। শরীরের ৬৬ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে আজ শুক্রবার ১৬ আগস্ট ভোর সাড়ে ৬টায় তিনি মারা যান।

আরো পড়ুন  শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, কী বলছে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম

অপরদিকে নিহত আসিফের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরআলিপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মোর্শেদ আলম। তার গ্রামের প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন ও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ জানান, আসিফ কিছুদিন আগে পড়ালেখা বাদ দিয়েছেন। বর্তমানে এলাকাতে একটি দোকানে কাজ করতেন। গত ৫ আগস্ট মিছিল দিয়ে বেগমগঞ্জ থেকে পার্শ্ববর্তী সোনাইমুড়ি থানায় গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিনই তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসাধীন গতকাল ১৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান।

আল আমিন হোসেনের বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামে। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন বাবু। তার ছোট ভাই মো. রাসেল হোসেন জানান, বরগুনার আমতলীতে রেনেটা ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি করতেন আল আমিন। থাকতেন আমতলী শহরে। গত ৫ আগস্ট কাজ শেষে তিনি সেখানকার বাসার দ্বিতীয় তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা বাসার নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় তলায়। ঘুমিয়ে থাকা আল আমিনসহ তার কয়েকজন সহকর্মীর শরীরেও আগুন লেগে যায়। তখন তারা শরীরে আগুন নিয়েই ২য় তলা থেকে লাফিয়ে রাস্তায় পড়েন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে নিয়ে যান। পরদিন ৬ আগস্ট তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শরীরের ৩৬ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে শুক্রবার ১৬ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টায় আইসিইউতে তিনি মারা যান।

আরো পড়ুন  ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ, যা জানা গেল

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ৪টি ময়নাতদন্ত শেষে তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ