স্বপ্ন ছিল তার আকাশ ছোঁয়ার। ডানা মেলে পাখির মতো দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াবার। কিন্তু সেই স্বপ্নকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরায়েলি সেনাদের বর্বর হামলা।
লোকগানের ভাষায় বলা হয়, আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি-মন বান্ধিবি কেমনে? আমার চোখ বান্ধিবি, মুখ বান্ধিবি-পরান বান্ধিবি কেমনে? বাস্তবে এই গানের জীবন্ত উদাহরণ হয়ে আছেন গাজার এক তরুণী। ইসরায়েলি সেনাদের বর্বরতায় বিশ্ব ভ্রমণের সম্ভাবনা থেমে গেলেও থেমে নেই তার মন।
২০ বছর বয়সী নুর আল রামলাওয়ি। গাজা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা এই তরুণী স্বপ্ন দেখতেন বিশ্ব ভ্রমণের। সম্প্রতি তুরস্কে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি অর্জন করেন তিনি। কিন্তু ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। তারপর মেয়াদ শেষ হওয়া পাসপোর্টে আঁকতে থাকেন বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যের ছবি। যুদ্ধের দামামার মধ্যেই এভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন তার বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন।
এ বিষয়ে নুর আল রামলাওয়ি বলেন, আমি যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করছি, কিন্তু এটা শেষ হচ্ছে না। আমি তুরস্কে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছি। কয়েক মাস পর আমি সীমান্ত পারি দেয়ার আবেদন করি, যখন সময় আসে তখন সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে আমি আর যেতে পারি না।
রামলাওয়ি তার পাসপোর্টের খালি পৃষ্ঠাগুলোতে মস্কোর রেড স্কয়ারে অবস্থিত সেইন্ট বাসিল’স ক্যাথেড্যালের ছবি এঁকেছেন। এঁকেছেন প্যারিসের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের ছবিও। তার আঁকা ছবির মধ্যে রয়েছে মিসরের বিখ্যাত পিরামিড ও বহুল জনপ্রিয় উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ইস্তাম্বুলের দৃশ্য।
নুর আল রামলাওয়ি আরও বলেন, ব্যবহার করার আগেই আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এটিকে এমন কোনো কাজে ব্যবহার করব, যা আমি ভালোবাসি। আমি এটিকে একটি স্মারকগ্রন্থ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলাম, যাতে আমি যখনই এর দিকে তাকাবো তখন আমার হারানো স্বপ্নগুলো মনে করতে পারি।
গাজার এ তরুণী আশা করেন একদিন এ যুদ্ধের সমাপ্তি হবে। তারা তাদের জীবন ফিরে পাবেন, যাতে তারা প্রিয় শহরকে আবারও তৈরি করতে পারেন এবং হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেন। তিনি বিশ্বভ্রমণ করতে চান এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান বলেও জানান।