বাংলাদেশ মানে শুধু শেখ মুজিব নয়। বাংলাদেশ মানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মেজর জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানীও বটে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ছাত্র-জনতার সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘১৯৭১ সালে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আনা হয়েছিল। ৭২ থেকে ৭৫-এ মুজিবের শাসনামলে মুজিববাদের মাধ্যমে, রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে; ব্যক্তি স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার স্বাধীনতা, খাদ্যের স্বাধীনতাসহ সব স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা মুজিববাদের কথা বলব। একাত্তরের আগের শেখ মুজিব আর ৭২ থেকে ৭৫-এর শেখ মুজিবের কথা বলব। আমাদের বারবার ইতিহাসে শেখ মুজিবকে একজন আইডল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয় বাংলাদেশ মানে শেখ মুজিব। বাংলাদেশ মানে শেখ পরিবার। বাংলাদেশ মানে শেখ কামাল। বাংলাদেশ মানে শেখ হাসিনা। কিন্তু আমরা তরুণ প্রজন্ম ২৪ এর গণবিপ্লবে অংশগ্রহণ করে আমরা এই জাতির কাছে হিস্যা চাইব, আমরা হিস্যা চাইব, ঐতিহাসিক হিস্যা।
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশর ইতিহাসে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হিস্যা চাইব, আমরা হিস্যা চাইব শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের হিস্যা; আমরা চাইব মওলানা ভাসানীর হিস্যা, আমরা ঐতিহাসিক হিস্যা চাইব, মেজর জিয়াউর রহমানের হিস্যা; মেজর জলিলের হিস্যা।
‘বাংলাদেশ মানে শুধু শেখ মুজিব নয়। বাংলাদেশ মানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীও বটে; বাংলাদেশ মানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকও বটে; বাংলাদেশ মানে মেজর জিয়াউর রহমানও বটে; বাংলাদেশ মানে মওলানা ভাসানীও বটে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ।’
তিনি আরও বলেন, আমার দেশের একজন বীরকেও যদি অসম্মান করা হয়; তাহলে আমাদের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করা হয়, তাহলে আমাদের মানচিত্রকে অসম্মান করা হয়। ৭ মার্চের সরকারি ছুটি বাতিল মানে ৭ মার্চকে অস্বীকার করা নয়। শেখ হাসিনা ৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল; সে কি ৭ মার্চকে তখন সরকারি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল?
হান্নান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই দেশে সব মানুষ দল-মত নির্বিশেষে একত্র হয়ে; ধর্ম বর্ণ একত্রিত হয়ে রাজপথে নেমেছিল বলেই ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। একতাবদ্ধ বাঙালিদের একতা কেউ ভাঙতে পারবে না। তাদেরকে আটকে রাখতে পারবে না। তার প্রমাণ ২৪-এর বিপ্লব।
হান্নান আরও বলেন, ১৬ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল বলেই ২৪-এ ছাত্র জনতার নেতৃত্বে এ অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি গত ১৬ বছরে বিক্রি হয়ে যেত, তাহলে আমরা ২৪-এ এসে গণঅভ্যুত্থান করতে পারতাম না। আমরা যখন গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছি রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল বলেই আমরা গণঅভ্যুত্থান করতে পেরেছি। এই বাংলাদেশের মানুষ, বারবার জীবন দিয়েছে, বারবার তাদের স্বাধীনতা তারা অর্জন করে নিয়েছে। এই বাংলাদেশের মানুষ কখনো কারও কাছে নত হয় নাই। বাংলাদেশের ইতিহাস মাথানত না করার ইতিহাস। মাথা উঁচু করে কীভাবে বাঁচতে হয়, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের কাছে তার উদাহরণ। বারবার লড়াই করে, বারবার রক্ত দিয়ে তারা তাদের স্বাধীনতাকে বাঁচিয়ে রাখে।
কিনি বলেন, ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করছিল না। তখন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল সিপাহিরা। প্রীতিলতা রক্ত দিয়েছে, সূর্যসেন রক্ত দিয়েছে, তিতুমীর রক্ত দিয়েছে, হাজী শরীয়তুল্লাহ রক্ত দিয়েছে। সেই লড়াই এর বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে এসে একবার আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। ১৯৪৭ সালের সেই স্বাধীনতা এনেছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক। এদেশের মানুষ ভেবেছিল পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে উপমহাদেশের মুসলিমরা স্বাধীনতা পাবে। তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। আবার আমাদের ঘাড়ে বসেছিল পাকিস্তানি শোষকরা। পাকিস্তানি শাসক ও শোষকদের নির্যাতনের কারণে আমাদের মোহ ভঙ্গ হয়। তারআগে একবার আমাদের এখানে স্বাধীনতার আলাপ উঠেছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশকে শাসন করা হতো এবং শোষণ করা হতো। তৎকালীন বুদ্ধিজীবীরা, তৎকালীন নেতৃত্ব পূর্ববঙ্গকে আলাদা করে বঙ্গভঙ্গ করেছিল ১৯০৫ সালে। কিন্তু সেই পশ্চিমবঙ্গে দাদাদের চাপে ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ রদ করে এই দেশের স্বাধীনতাকে আরেকবার হনন করে।’
সমাবেশে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালী জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।