লেখক, সাংবাদিক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদী স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা টিকে ছিল। এ সময় রাষ্ট্রটি গঠন করা হয়েছিল সংবিধান, আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে।
তিনি বলেন, গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন ছিল যে, ভয় দেখিয়ে করছে শাসন জয় দেখিয়ে নয়। এই ১৫ বছরে কথিত বুদ্ধিজীবীরা আত্মা বিক্রি করে দাসত্বকে মেনে নিয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের গল্প’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে একেকটি বিষয় পিলার হিসেবে কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ব্যক্তির কথা বলে ইতিহাসের বিশেষ একটি ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের কথিত বুদ্ধিজীবীরা তাদের আত্মা বিক্রি করে দাসত্বকে মেনে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই দাসত্বকে নিজেদের অর্জন বলে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে তারা।
তিনি বলেন, এর আগে বাংলাদেশে তিন তিনবার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল করতে বড় ভূমিকা পালন করেছিল শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও কবিরা। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের সময় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট তৈরি হয়েছিল। সেখানে কবি-শিল্পী, সাহিত্যিকরা কবিতা পরিষদ করেছিলেন। কিন্তু এই প্রথম চব্বিশের আন্দোলনে তথাকথিত কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীরা শেষ মুহূর্তেও আন্দোলনে যুক্ত হননি। কারণ হিসেবে দাসত্বকেই দায়ী করা যায়।
আন্দোলনে আহত তরুণ লেখকদের নিয়ে এ প্রফেসর বলেন, তরুণরা আহত হয়েছে বলে আমি তাদের দেখতে আসিনি। আমি তাদের কথা শুনতে এসেছি। আমি তাদের বীর মনে করি এবং বীরদের কাছ থেকে শিখতে চাই। এই আদর্শিক হেজিমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই-সংগ্রাম তা অব্যাহত রাখা জরুরি।
আহত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তার প্রতিবাদ করেছেন ড. আলী রীয়াজ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যখন রাষ্ট্র শিল্পকে পোষণ করবে তখন তাদের প্রতিবাদী মনোভাবে কোথাও না কোথাও আপোষ তৈরি হবে। যদিও আমি রাষ্ট্রীয় সম্মানকে ছোট করে দেখছি না। তবে বুদ্ধিজীবীদের কাজ ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা। আর এগুলো করতে পারে স্বাধীন বুদ্ধিজীবীরা।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার কারণ হিসেবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনসহ বিভিন্ন এজেন্সি ও মধ্যরাতের টেলিফোন দেওয়াকে দায়ী করেছেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো মালিকানা সূত্রে প্রকৃত গণমাধ্যম হয়ে ওঠেনি বলেও মন্তব্য করেন ড.আলী রীয়াজ।