যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এরই মধ্যে সারা বিশ্বে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারণ, পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে যিনি বসবেন তার মতাদর্শের প্রভাব সারা বিশ্বে পড়বে। বিশেষ করে এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকার প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। এদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিজেদের অনেকটা কাছের ভাবতে শুরু করেছেন গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ মনোভাবের পেছরে রয়েছে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থান।
সেই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার আগে ও পরে এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অতীতে মার্কিন রাজনীতিকদের, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক দেখা গেছে। ডেমোক্র্যাট ক্ষমতায় থাকাকালে অর্থাৎ জো বাইডেনের আমলেই শেখ হাসিনার পতন ঘটে এবং ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এরপর থেকে তার সরকারকে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে আসছে মার্কিন প্রশাসন।
কিন্তু এবার মার্কিন মসনদে রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় এলে বা কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্সিতে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় টিকে গেলে বাংলাদেশে কী ঘটতে পারে? এ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি রিপাবলিকার প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইটকে ঘিরে আলোচনা আরো জোরালো হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা এটিকে ভবিষ্যৎ নীতির চেয়ে নির্বাচনে আমেরিকার হিন্দু ভোটার টানার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জায়গা থেকে তারা ধারণা করছেন, ‘কিছু লবি গ্রুপ হয়তো বা এটাকে ইনফ্লুয়েন্স করতে চেয়েছে এবং সেই আলোকেই তার এই স্টেটমেন্টটা এসেছে।’ লবি গ্রুপ বলতে আওয়ামী লীগ অথবা ভারতকে বোঝানো হয়েছে, এমন আলোচনাও রয়েছে।
এ ইস্যু ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করা গেলেও ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং লেখক মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি জানান, ইউনূস অতীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে বক্তব্য রাখার সময় ড. ইউনূস ট্র্যাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণ’ বা অন্ধকার সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি হেকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
কুগেলম্যানের মতে, কমালা হ্যারিস জিতলে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্কের জন্য একটা সম্পদ হবেন, কারণ বাইডেন প্রশাসনের মত হ্যারিসের ক্ষেত্রেও একটা স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা থাকবে। তবে ট্রাম্প জয়ী হলে সে সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন বলেন, সাধারণত আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বৈদেশিক নীতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয় না। এর পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বা কাঠামোগুলোর একটা শক্তিশালী ভূমিকা থাকে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু ট্রাম্পকে আমরা দেখেছি কিছু প্রচারণায় ইনস্টিটিউশনকে বদলে দেয়ার কথা বলছেন। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রবন্ধে বিভিন্ন জন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কমলা হ্যারিসকেই ক্ষমতাসীনদের পছন্দ হিসেবে দাবি করেছেন। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ড. ইউনূসের সরকার চিন্তিত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
তবে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভালো সম্পর্ক থাকায় এবং দুই শিবিরেই তার বন্ধু থাকায় এই নির্বাচনের ফলাফলে দুই দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না।