23 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

রাবি ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ফের অস্ত্রের মহড়া!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ানোর পর এবার এক নেতাকে ‘হত্যার’ হুমকির অভিযোগকে কেন্দ্র করে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ফের অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। তারা রামদা, রড, ইট-পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে এ মহড়া দেয়।

এদিকে ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়ার পর রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন এবং পুলিশ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান চালায়। অভিযান শেষে গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

দ্বন্দ্বে জড়ানো পক্ষ দুটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ।

ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত দেড়টার দিকে নিয়াজ মোর্শেদ তার অন্তত ১২ অনুসারীকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলে প্রবেশ করেন। এ সময় হলগেটে ওই হলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের সঙ্গে নিয়াজের দেখা হয়। একপর্যায়ে নিয়াজ তাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন আতিক। তবে হত্যার হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেন নিয়াজ। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে সভাপতি বাবু ও সাধারণ সম্পাদক গালিবের অনুসারীরা জড়ো হতে থাকেন। অন্য হল থেকেও নেতাকর্মীরা সেখানে যোগ দেন। এ সময় তাদের হাতে রামদা, রড, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ইট-পাটকেল দেখা গেছে।

আরো পড়ুন  শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জীবনবৃত্তান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা ছাত্রলীগ পদপ্রত্যাশীদের

খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে, সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিছুক্ষণ পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও সেখানে উপস্থিত হন।

এ সময় সভাপতি-সম্পাদক সোহরাওয়ার্দী হলে বহিরাগত প্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ করেন। সেইসঙ্গে একটি চক্র ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলেও জানান। পরে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে রাত সোয়া ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান চালায় হল প্রশাসন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান শেষ হলে নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

আরো পড়ুন  শেখ মুজিব ১৫ বছর সময় পেলে হাসিনাকেও ছাড়িয়ে যেতেন : মাহমুদুর রহমান

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, জোহা ও মাদার বখশ হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেশ কিছু বহিরাগতকে ডাইনিংয়ের ছাদ দিয়ে হলে প্রবেশ করতে দেখেন। বিষয়টি তারা জানতে পেরে প্রক্টর স্যারকে অবহিত করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় হলে অভিযান চালায়। তাদের এক নেতাকে হত্যার হুমকির খবর পেয়ে সেখানে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। তবে তাদের হাতে রামদা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র থাকার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে এড়িয়ে যান।

জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, হলগেটে নিয়াজ ও তার অনুসারীদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। এ সময় তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। একপর্যায়ে তারা আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।

আরো পড়ুন  নবম শ্রেণির বইয়ে নারীদের অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইট!

তবে বহিরাগত প্রবেশ ও হত্যার হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ জানান, সবার সামনে হলের ১০ জন ছোট ভাই নিয়ে তিনি হলে প্রবেশ করেন। সেখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল। হলগেটে আতিকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল; কিন্তু কোনো কথা হয়নি। হত্যার হুমকির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, হলে বহিরাগত প্রবেশের খবর পেয়ে অভিযান চালাই। এ সময় আমরা একটি চাইনিজ কুড়ালের অংশবিশেষ পেয়েছি। এ ছাড়া কিছু সন্দেহজনক কক্ষে অভিযান চালিয়েছি। সেখানে কিছু অনাবাসিক শিক্ষার্থী দেখতে পাই; কিন্তু কোনো বহিরাগতকে হলে পাওয়া যায়নি। হলের বাইরে এক পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতে রামদা, রড ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন দৃশ্য দেখিনি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার অতিথি কক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ৬টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ সংবাদ