নিজ দেশ থেকে অন্য দেশে গোপনে অর্থ জমা রাখার সুযোগ রয়েছে যেসব দেশে, সেগুলোর পরিচিতি ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ হিসেবে। লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা বারমুডার মতো বিভিন্ন দেশে অর্থের উৎস জানানোর ঝামেলা নেই; করের হিসাব-নিকাশও নেই। এ ধরনের ট্যাক্স হেভেন দেশে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিয়েই ডলার বা সম্পদ ক্রয় করতে পারেন। আর ওই সম্পদকে বলা হয় অফশোর সম্পদ।
ট্যাক্স হ্যাভেন হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে ২০২২ সালে কী পরিমাণ অফশোর সম্পদ রয়েছে, এর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি প্রকাশিত অ্যাটলাস অব অফশোর ওয়ার্ল্ড নামের ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের সম্পদের পরিমাণও।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ট্যাক্স হ্যাভেন নামে পরিচিত দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের সম্পদ রয়েছে ৫৯১ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এসব অর্থের একটি অংশ ব্যয় হয়েছে আবাসন খাতে। এই খাতে ব্যয় প্রায় ৬৬ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৭ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। লন্ডন, প্যারিস, দুবাইয়ের মতো বিভিন্ন শহরে কেনা হয়েছে এসব সম্পদ। তবে প্রতিবেদনে সম্পদের মালিকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
২০২০ ও ২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ট্যাক্স হ্যাভেন দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের সম্পদের পরিমাণ কমেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের অফশোর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮শ’ কোটি ডলারের বেশি।
এদিকে, এসব অর্থের উৎস খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, টাকা পাচার থেকে শুরু করে দেশে আয় করা অবৈধ টাকা সেখানে নিয়ে যাওয়াকে কেউ কেউ বেশি নিরাপদ মনে করে। এছাড়া তারা ভাবে এটিতে লাভও বেশি। এমনটি দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়। তাদের কারণে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হতে হবে।