27 C
Dhaka
Wednesday, July 3, 2024

হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কলেজছাত্রী উদ্ধার

নিখোঁজের একদিন পর হাত-পা, মুখ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কলেজ পড়ুয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার (৩১ মে) রাত ১০টার দিকে ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া কাঠের ব্রিজের ওপর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ভূক্তভোগী কিশোরীর অভিযোগ, প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করায় প্রেমিক সিয়াম ও তার সঙ্গীরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ব্রিজের নিচে ফেলে গেছে।

অভিযুক্ত সিয়াম পেদা (১৯) ডামুড্যা উপজেলার সিঁদুলকুড়া ইউনিয়নের ছোট সিঁদুলকুড়া গ্রামের খোদা বক্স পেদার ছেলে। সে গোসাইরহাটের সরকারি শামসুর রহমান কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শনিবার (১ জুন) শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ওই কিশোরীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিকে, অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

ভূক্তভোগীর পরিবার ও পুলিশ জানায়, গোসাইরহাটের সরকারি শামসুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থী সিয়াম পেদারের সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর। কিছুদিন আগে ব্যক্তিগত একটি বিষয়ে কথা কাটাকাটির জেরে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। এরপর গত ৩০ মে ওই কিশোরী কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ডামুড্যার ফরাজি টেক নামক স্থান থেকে সিয়াম পেদা ও তার চার জন সঙ্গী ওই কিশোরীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর হাত, পা ও মুখ বেঁধে অজ্ঞান করে পরিত্যক্ত একটি ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে সিধল কুঁড়া কাঠের ব্রিজের ওপর ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

আরো পড়ুন  ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে আইনজীবীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

এদিকে ওই কিশোরী বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করতে থাকে। কোথাও না পেয়ে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি ডামুড্যা থানা পুলিশকে অবহিত করে তারা। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে ডামুড্যা থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভূক্তভোগীর বাবা জানতে পারে ডামুড্যার সিঁদুলকুড়া কাঠের ব্রিজের ওপর হাত-পা, চোখ মুখ বাঁধা অবস্থায় এক কিশোরীকে পাওয়া গেছে। এরপর ভূক্তভোগীর বাবা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কিশোরীকে শনাক্ত করে। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভূক্তভোগীকে উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসার জন্য পাঠায়। অচেতন থাকার উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই কিশোরীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সের চিকিৎসকরা। এরপর ভূক্তভোগীকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুন  বাবা-মাকে নির্যাতন, চিকিৎসক ছেলের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে মায়ের অভিযোগ

জানতে চাইলে ভূক্তভোগী কিশোরী বলেন, প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করায় কলেজ থেকে ফেরার পথে সিয়াম ও তার সঙ্গে থাকা চারজন ব্যক্তি হাত-মুখ বেধে অজ্ঞান করে আমাকে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। এরপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তারা আমার হাত-পাতা, মুখ চোখ বেধে ব্রিজের ওপর ফেলে রেখে যায়।

বিষয়টি নিয়ে ভূক্তভোগীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে নিঁখোজের সংবাদ থানায় জানিয়ে আমরা বাড়িতে ফিরতেছিলাম। এমন সময় খবর পাই সিধলকুড়া ব্রিজের ওপর হাত-পা বাধা অবস্থায় একটি মেয়েকে পাওয়া গেছে। এরপর ওই ব্রিজে গিয়ে আমি আমার মেয়েকে চিনতে পারি। পরে পুলিশ গিয়ে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রবিবার সকালে মেয়েকে সহ পুলিশ আমাকে থানায় যেতে বলেছে। তারা বলেছে মেয়ের মুখের কথা শুনে তারপর যা করার তা করবে। আমি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করব। ওদের বিচার চাই।

আরো পড়ুন  মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে ছিলেন সেলিম, পেটে কাটা দাগ নিয়ে সন্দেহ

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মিতু আক্তার বলেন, ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত সংগ্রহ করে ওই কিশোরীকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য সিয়াম পেদার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমারত হোসেন বলেন, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক কিশোরীকে সিঁদুলকুড়া ব্রিজের ওপর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরীকে ব্রিজের ওপর থেকে উদ্ধার করার আগে তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল থানায়। তবে অভিযোগটি নথিভূক্ত করার আগেই আমরা জানতে পেরেছি কিশোরীকে ব্রিজের ওপর পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। এঘটনায় ভূক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ