পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন অগ্রগতি সহ্য করতে পারছে না বিএনপি। সেই কারণে তারা এখন নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
শুক্রবার (৭ জুন) সকালে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাঙালির মুক্তি সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস স্মরণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাজেটের অংক সাড়ে ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার বৃদ্ধি পাওয়া মানে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে। দেশের বাজেটের আকার যখন বৃদ্ধি পায় তখন বুঝতে হবে দেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত বাজেট ঘোষণার আগেই বিবৃতি রেডি করে রাখে। গত ১৫ বছরে তাদের বিবৃতি-বক্তব্য যদি দেখেন, হুবহু মিল খুঁজে পাবেন।
বাজেটের সমালোচকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘বাজেট জনগণের কল্যাণে যদি না এসে থাকে, তাহলে গত ১৫ বছরে দরিদ্রতা ৪০ শতাংশ থেকে নেমে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এলো কীভাবে? আর অতিদরিদ্রতা ২২ শতাংশ থেকে ৫.৭ শতাংশে কীভাবে নেমে এসেছে? এটি সম্ভবপর হয়েছে বাজেট বাস্তবায়নের কারণেই। বিএনপি-জামায়াত ও কতিপয় বুদ্ধিজীবিরা আসলে চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির। ওদের চোখ এবং কান যেন মহান স্রষ্টা ঠিক করে দেন, সেই প্রার্থনা করি।’
‘দেশে বুদ্ধিজীবী কয়েক প্রকার’ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা হচ্ছে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ, আরেকটা হচ্ছে বিশেষ কারণে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, আরেকটা হচ্ছে সব বিষয়ে বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ। কিছু বিশেষজ্ঞ নামধারীরা এবং বিএনপি-জামায়াত প্রতিবারের মতো এবারও বলতে শুরু করেছে- এ বাজেট জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ছয় দফা প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, পূর্ববাংলার মানুষের মাঝে স্বাধীনতার পক্ষে মনন তৈরি করার জন্যই বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। ছয় দফার পক্ষে মানুষ ব্যাপক সাড়া দেন। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা নিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান, যেখানেই বক্তব্য দেন সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হতো। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন।
তিনি বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর ছয় দফার ওপর ভিত্তি করেই দেশে সাধারণ নির্বাচন হয়। জনগণ ছয় দফার পক্ষেই ভোট দেয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বিলিতে মেজরিটি পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে যখন বাহানা করা হচ্ছিল তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ছয় দফা যখন ঘোষণা করেছিলাম তখন এটি আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ মুজিবের দফা ছিল, নির্বাচনের পর এটি জনগণের দফায় পরিণত হয়েছে। জণগণই ছয় দফার পক্ষে রায় দিয়েছে। আমি ছয় দফার বাইরে কোনো আপস করতে পারব না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি আপস করতেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নয়, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। সে কারণে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি স্বাধীনতার লক্ষ্যে এগিয়ে যান এবং বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, সমস্ত সংকট-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় আজকে আওয়ামী লীগ পরপর চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বিরোধী শক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের চোখ কান সবসময় খাঁড়া রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ, কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু প্রমুখ।