27 C
Dhaka
Wednesday, October 23, 2024

‘আমারে দেখিবার আইসো শেষ জানাজার আগে’

আমারে দেখিবার আইসো শেষ জানাজার আগে যেন পরকালে তোমায় দেখার একটু স্বাদ না জাগে…! আত্মহত্যার ঠিক আগের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সাথী আক্তার।

এর একদিন আগে লিখেছেন, ‘আহা শখের পুরুষ, তুমি যে পরিমাণ খেলা দেখাইলা, সে খেলায় মীরজাফরও ফেল’। শুধু তাই নয়, ‘এক সপ্তাহ আগেও লিখেছেন, আবেগ এখন নিয়ন্ত্রণে; তবে আমি ধ্বংসের শেষ দিকে’।

এমন একাধিক আবেগঘন পোস্ট রয়েছে তার ফেসবুক ওয়ালে। ধারণা করা হচ্ছে, এনজিও কর্মকর্তা রাজ বিশ্বাসের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে খুলনার হরিণটানা থানার পিঁপড়ামারি এলাকায় দশম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

শনিবার (১৫ জুন) রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সাথীর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান তার পরিবার। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

আরো পড়ুন  মুন্সীগঞ্জে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 

নিহত সাথী আক্তার হরিণটানা থানার ঠিকরাবাদ পিপড়ামারী এলাকার বালু ব্যবসায়ী ইউসুফ শেখের বড় মেয়ে। সে প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

পুলিশ ও সাথীর পরিবারের সদস্যরা জানান, সাথী আক্তারের সঙ্গে দেড় বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও’র হিসাবরক্ষক রাজ বিশ্বাসের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এর জের ধরে শনিবার রাত ১২টার দিকে সাথী রাজ বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পর, নিজের ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাতেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ রোববার দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মরদেহ বাড়িতে নিয়ে গেলে সাথীর বাবা ইউসুফ শেখ ও মা কুলসুম বেগমসহ পরিবারের সদস্য এবং সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এছাড়া এলাকার অসংখ্য মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় করেন। বিকেলে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়।

আরো পড়ুন  আশুলিয়ায় বাসাবাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি | কালবেলা

এদিকে রোববার বিকেলে ওই ছাত্রীর ডায়েরি থেকে সুইসাইড নোট পেয়েছে পুলিশ। সেখানে উঠে এসেছে বাবার ওপর অভিমান থেকে এই আত্মহত্যা। নোটে সাথী আক্তার লেখেন, ‘বাবা আমি মরে গেলে তুমি হয়তো কান্না করবা। আমি মরতে চাইও না। তোমার জন্য আমার অনেক খারাপ লাগে। তুমি রাতে কিভাবে ঘুম পাড়, আমাদের কথা তোমার মনে পরে না বাবা। আমি কখনো কোন ছেলের সাথে প্রেম করিনি। তুমি শুনলে কি মনে করবে বা মানুষ শুনলে তোমাকে কি বলবে। আমার আল্লাহর কাছে তোমাকে বলতে হবে আমার ভাই আমার মা কি দোষ করেছে। তুমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতা আমাদের সাথে। মানুষ মনে করে আমি কত হ্যাপি থাকি, কিন্তু আমার মন তো সব সময় খারাপ থাকে। তুমি আমার আবেক ভালোবাসা মনের ভাষা বুঝতে পারো না। তোমার জন্য কত রাত আমি কান্না করি। অনেক মনে পরে ছোটবেলার কথা। তোমাকে একবার দেখার জন্য কত সময় অপেক্ষা করতাম। তুমি কিভাবে থাক বাবা। আমার চোখের পানিগুলো তুমি দেখতে পাবে না আর’।

আরো পড়ুন  বন কর্মকর্তাদের কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা, দুই বনদস্যু ধরা

এছাড়াও চার পাতার এই নোটে আরও অনেক কিছু লিখেছেন তিনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) মো. তাজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছেন। যদি আত্মহত্যার প্ররোচনার সত্যতা পাওয়া যায়। তাহলে সেই ধারায় মামলা হবে এবং পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সর্বশেষ সংবাদ