সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ ওভারে সূর্যকুমার যাদবের অবিশ্বাস্য সেই ক্যাচ অনেকদিন মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। বাউন্ডারি লাইনের ধারে ধরা সেই ক্যাচ ম্যাচের রং বদলে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁদিয়ে বিশ্বকাপখরা কাটে ভারতের।
তবে ক্যাচটি নিয়ে ভারতীয় দর্শকরা সূর্যকুমারকে প্রশংসায় ভাসালেও বিতর্কও কম হচ্ছে না। অনেকেই মনে করছেন বাউন্ডারির দড়ি ঠিক জায়গায় ছিল না। যেখানে থাকার কথা, তার থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আসলে সত্যিটা কী?
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল প্রোটিয়াদের। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ২০তম ওভারের প্রথম বলেই লং অফে উড়িয়ে মারেন ডেভিড মিলার। সীমানা দড়ির কাছে প্রায় ছোঁ মেরে সূর্যকুমার যাদব সেটিকে তালুবন্দী করেন। সূর্য বাউন্ডারিতে বল ধরে বুঝতে পেরেছিলেন দড়ির ওপারে চলে যেতে হবে। তাই বল আকাশে ছুঁড়ে আবার দড়ির এপারে এসে ক্যাচ ধরেছিলেন। সেই ক্যাচই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়।
কিন্তু ক্যাচের ছবি দেখিয়ে অনেকের প্রশ্ন, বাউন্ডারির দড়ি কি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল? সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, যেখানে বাউন্ডারির দড়ি রয়েছে, তার সামনে একটা সাদা দাগ রয়েছে। যেখানে বাউন্ডারির দড়ি থাকে, তার নীচে এই দাগ আপনিই তৈরি হয়ে যায়। কারণ সেখানে রোদ না পৌঁছানোয় ঘাসের রং বদলে যায়। যেহেতু বাউন্ডারি দড়ির নীচে এই দাগ তৈরি হয়, সেটি দেখা যাওয়ার কথা নয়। বাউন্ডারির দড়ি একই জায়গায় থাকলে কী করে ওই দাগ দেখা গেল, এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কেউ কেউ আঙুল তুলেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দিকেও।
কিন্তু যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন ভারতীয় ধারাভাষ্যকার রাজনীষ গুপ্ত। ফাইনালে ধারাভাষ্যে থাকা এই কমেন্টেটর দাবি করেছেন, যেহেতু ফাইনালে পিচ বদল হয়েছিল, তাই ওই প্রান্তের বাউন্ডারিও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ম্যাচের শুরু থেকেই এটি করা হয়েছিল। সব ম্যাচেই প্রয়োজন মতো বাউন্ডারি ছোট-বড় করা হয়। এখানেও সেটিই করা হয়েছে। তাই আগের বাউন্ডারি দড়ি যেখানে ছিল, সেই দাগ দেখা যাচ্ছে।
তিনি লেখেন, ‘আমি মাঠে ছিলাম। ধারাভাষ্য দিচ্ছিলাম। বাউন্ডারির দড়ি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে না। গোটা ম্যাচেই দড়ি ওই জায়গায় ছিল। পিচ বদল হলে বাউন্ডারির দড়ির জায়গাও বদল হয়। এটাই স্বাভাবিক। সেই কারণে মাঠে অনেক সময়ই সাদা দাগ দেখতে পাওয়া যায়। গোটা মাঠেই দড়ির জায়গা বদল করা হয়েছিল। কোনো একটি বিশেষ জায়গার নয়। কোনও দলকে বাড়তি সুবিধা করে দেওয়ার জন্য এমন করা হয়নি। এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করার কোনো মানে নেই।’
সাধারণত মাঠে একাধিক পিচ তৈরি করা থাকে। যে পিচে খেলা হচ্ছে, সেই পিচ থেকে বাউন্ডারির দূরত্ব মাপা হয়। ফলে এক একটি পিচের ক্ষেত্রে বাউন্ডারির দূরত্ব বদল হয়। সেটা ঠিক করার জন্যই দড়ির জায়গা বদল করা হয়েছিল। সেটার দাগই দেখা যাচ্ছে সূর্যকুমার ক্যাচ নেওয়ার সময়।
সূর্যকুমার ম্যাচের যে সময় বুদ্ধি করে ক্যাচটি নিতে সফল হয়েছিলেন, তা অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ দিলীপ। বলছেন, ‘অনেকেই সূর্যকুমারের ক্যাচটা নিয়ে জানতে চাইছেন। অনুশীলনে এ রকম ক্যাচ ও অন্তত ৫০টা ধরেছে। তবে ম্যাচের সময় সিদ্ধান্তটা ওরই ছিল। উপস্থিত বুদ্ধি এবং ক্রিকেট সচেতনতার উদাহরণ ওই ক্যাচ। বাউন্ডারির দড়ি কোথায় আছে, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ছিল সূর্যকুমারের। তাই ওকে ক্যাচটা ধরার সময় যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। নিজে লাইনের বাইরে চলে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বল শূন্যে ছুড়ে দিয়েছিল। আবার মাঠের মধ্যে পা দেওয়ার পর ক্যাচ সম্পূর্ণ করেছে। ওই মুহূর্তে ওটা সম্পূর্ণ সূর্যকুমারের সিদ্ধান্ত।’
মিলারের ওই ক্যাচের জন্য বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় দলের সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার পেয়েছেন সূর্যকুমার। খেলা শেষ হওয়ার পর সাজঘরে সূর্যকুমারের হাতে সেরা ফিল্ডারের পদক তুলে দিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সচিব জয় শাহ। দিলীপের মতে, বড় বা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে এই ধরনের পারফরম্যান্সই পার্থক্য তৈরি করে দেয়। ফাইনালের রং বদলে দেওয়া ক্যাচের কৃতিত্ব সম্পূর্ণ সূর্যকুমারের বলে জানিয়েছেন ভারতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ।