বোনের করা মামলায় তার সহকর্মীকে ফাঁসাতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলমকে ‘ঘুষ’ দেন ভাই। আর ঘুষ দেওয়ার সেই ভিডিও পরিকল্পিতভাবে ধারণ করে রাখা হয়। যাতে করে ওই ভিডিও দেখিয়ে পুলিশকে পরবর্তী সময়ে জিম্মি করে তাদের নির্দেশনা মতো কাজ করানো যায়।
চন্দ্রিমা থানার ওসি বিরুদ্ধে দপ্তরে বসে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যার পর ভাইরাল হয়। এরপর সেই ঘটনার অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ভিডিওতে যে ব্যক্তি ওসিকে খামে করে ঘুষের টাকা দেন তার নাম মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাস। তার বোন রুবানা ফেরদৌস পশ্চিমাঞ্চল রেলের মেকানিক্যাল শাখার ট্রেসার পোস্টে কর্মরত।
এদিকে এই মামলা নেওয়া সরকারি কর্মচারী ও মামলার আসামি শিকাদরকে গ্রেপ্তার করতে চন্দিমা থানার ওসি মাহাবুবকে কয়েক দফায় টাকা দেওয়া হয়। সেই অর্থ লেনদেনের কাজটি করেন রুবানার ভাই মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আর সেই ঘুষ দেওয়া অপরজনকে দিয়ে ভিডিও করিয়ে রাখেন মোস্তাফিজুর রহমান।
গত ২০ মে রুবানা অফিসের সহকর্মী মেকানিক্যাল শাখার ফেরো প্রিন্টার আব্দুল খালেক শিকদারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ৭ মে শিকদার তাদের দপ্তরে রুবানাকে শ্লীলতাহানি করে বলে ওই মামলায় দাবি করা হয়। ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় তার অফিসের অপর চার সহকর্মীকে। তবে যাদের মামলার সাক্ষী করা হয়েছে তাদের সবার দাবি, তারা ওই ঘটনা দেখেননি বা জানেন না।
এই মামলায় গত ২৬ মে গ্রেপ্তার হন আব্দুল খালেক শিকদার। এখন তিনি জামিনে বের হয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
শিকদার বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী। আমার দুই ছেলেমেয়ে। তাদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে, নাতি-নাতনি রয়েছে। আমার স্ত্রীও আমার অফিসে চাকরি করে। রুবানাকে আমি মেয়ের মতো দেখি। সে তার মায়ের জমি লিখে নিতে আমাকে প্রথমে সাক্ষী হতে বলে। এরপর অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এটিএম মাসুদুল হাসান স্যারকে সাক্ষী হতে বললে উনি আমার সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং সাক্ষী হতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন রুবানাকে। এতে রুবানা মনে করে আমি স্যারকে মানা করেছি। তা ছাড়া মাসুদুল হাসান স্যারকে রুবানা বিয়ে করতে চায়। তাকে আর হাসান স্যারকে নিয়ে অনেকে কানাঘুষা করেন। অফিসের দরজা আটকে তাদের কাজ করা নিয়ে। এটা নিয়েও আমি তাকে সতর্ক করেছিলাম। এসব নিয়ে ও আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা মামলা করেছে। মামলার সাক্ষীরাও জানে না এমন ঘটনার কথা।
মামলার তৃতীয় ও চতুর্থ সাক্ষী এবং রেলের কর্মচারী তানজিরা রহমান ও মো. হারুন জানান, রুবানার সঙ্গে অফিসে এমন কিছু হয়েছে বলে তারা জানেন না। আর রুবানার মামলায় তাদেরকে সাক্ষী করার ঘটনাতেও তারা বিব্রত। থানায় তারা এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন।
তারা আরও জানান, রুবানা ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এটিএম মাসুদুল হাসানকে নিয়ে অফিসে বহুদিন থেকেই কানাঘুষা হচ্ছে। এটা নতুন বিষয় নয়।
মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এটিএম মাসুদুল হাসান বলেন, ‘রুবানার মামলায় যে সময়ের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। আমি ওই সময় ছিলাম না। সে কেন আমাকে সাক্ষী করল তা আমার জানা নেই।’
রুবানার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে অফিসে কানাঘুষার বিষয়ে তিনি জানান, ৪ থেকে ৫টি পোস্ট ফাঁকা থাকায় রুবানাকে নিয়েই আমাকে কাজ করতে হয়। এগুলো যারা ছড়াচ্ছে সব মিথ্যা।’
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মেকানিক্যাল শাখার ট্রেসার রুবানা ফেরদৌস বলেন, ‘আমি মামলা করেছি। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। পরে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তার ভাই মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাসের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল হরা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশকে খাম দেওয়ার ভিডিওটি আমরা পেয়েছি। ঘটনাটি অপেশাদারিত্ব প্রতীয়মান হওয়ায় ওসিকে আরএমপিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে এবং পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’