মেয়েকে শ্লীলতা ও ধর্মীর আচার মেনে জীবন পরিচালনা করাতে চাওয়াই কাল হলো বাবার। মেয়ের হাতেই হারাতে হলো প্রাণ।বাবার মৃত্যু ও দাফনের ৯ দিন পর থানায় আত্মসমর্পণ করে নিজেকে বাবাকে হত্যার কথা স্বীকারও করে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরী।
খুলনার দৌলতপুর দেয়ানা উত্তরপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটে। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে নিজের ছোট মেয়ের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে শেখ হুমায়ুন কবির নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে না ওঠায় তার স্ত্রী ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না দিলে স্ত্রীর সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এসে দেখে নিশ্চিত হন তিনি মারা গেছেন। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হুমায়ুন কবির মারা গেছেন।
তবে গোসল করানোর সময় তার বাম হাতের কনুইয়ের ওপরে দুটি ছিদ্র দেখে সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করেন পরিবার ও স্বজনরা। এরপর কারো অভিযোগ না থাকায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে। দাফনের পাঁচ-ছয় দিন পর থেকে মৃত ব্যক্তির ছোট মেয়ের কথাবার্তা ও আচরণে সন্দেহ হয় বড় বোনের। এক পর্যায়ে পরিবারের চাপে ১২ জুলাই দুপুরে ছোট মেয়ে থানায় গিয়ে নিজের দোষ স্বীকার করেন।
এদিকে এজাহারে নিহতের স্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘৩ জুলাই রাতে আমি এবং আমার মেজ মেয়ে বাহির থেকে হেটে বাসায় এসে হাত মুখ ধুয়ে প্লাস্টিকের জগে রাখা পানি পান করি। পানি পান করার কিছুক্ষন পর আমার প্রচুর ঘুম আসে। আমি আমাদের রুমে বিছানায় শুয়ে পড়ি। আমার স্বামী মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় এসে ফ্লোরে রাখা খাবার নিজে নিয়ে খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার স্বামী বিছানায় শুয়ার পর আমি ঘুম ঘুম চোখে উঠে খাবারের থালা বাটি গুছিয়ে রেখে আবার আমার স্বামীর পাশে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ১০ টার দিকে আমার ছোট মেয়ে আমাদের রুমে এসে তার ভয়ে ঘুম আসছে না বলে আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে যায়। আমি এবং আমার ছোট মেয়ে তার রুমে ঘুমিয়ে পড়ি।’
‘পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি গেটে তালা দেয়া। আমি আমার স্বামীকে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমানো অবস্থায় দেখে তার কাছে গিয়ে ডাক দেই। ডাকের সাড়া না পেয়ে আমার স্বামীর মুখে ও বুকে হাত দিয়ে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আমি আমার মেঝ মেয়েকে ডাক দিয়ে বলি তোর বাবা মনে হয় আর নাই। আমার মেজ মেয়ে রুমে এসে তার বাবার এ অবস্থা দেখে ডাক চিৎকার দিতে থাকলে তার বড় চাচা শেখ নজরুল ইসলাম ও আশপাশের প্রতিবেশীরা আসে।’
‘ঐ সময় আমার স্বামীর বাম হাতের বাহুর উপরের অংশে পাশাপাশি ২টি ছিদ্র দেখতে পাই এবং বাম হাতের আঙ্গুলে রক্ত দেখা যায়। ঐ সময় উপস্থিত অনেকেই ধারণা করছিল হার্ট স্ট্রোক জনিত কারণে মারা গেছে, আবার অনেকেই বলছিল সাপের কামড়ে মারা গেছে। যে কারণে থানা পুলিশকে না জানিয়ে আমার স্বামীর দাফন করি।’
এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর আমার ছোট মেয়ে স্বেচ্ছায় জানায় সে রাতের খাবার ও খাওয়ার পানিতে মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়েছিল এবং রাতে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। তখন আমি আমার ছোট মেয়ের কাছে তার বাবাকে মারার কারন জানতে চাইলে সে জানায় তার বাবা তাকে শাসন করত বিধায় রাগের বশে তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। কেউ যাতে ঘুম থেকে জেগে না উঠে সেই জন্য সে আমার খাওয়ার পানি ও আমার মেঝ মেয়েকে কোমল পানীয়ের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয় এবং যাতে তার বাবাকে সুকৌশলে মেরে ফেলার জন্য আমাকে তার কক্ষে নিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশের উপসহকারী পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন বলেন, ঘটনার পর মেয়েটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। মেয়েটি ট্রমার মধ্যে আছে। হত্যায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারিক মনোমালিণ্য থেকে এই হত্যাকান্ড হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে।
বাবার খুনের স্বীকারোক্তি দেয়া কিশোরী খুলনার একটি স্কুল থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বলেও জানান তিনি।