দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জরুরি প্রয়োজনে ডাক বিভাগের ৫ টাকা মূল্যের একটি খাম কিনতে যাতায়াত বাবদ রিকশা ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৪০ টাকা। ফলে একটি খামের মূল্য পড়ে যাচ্ছে ৪৫ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও এটিই সত্য। ফুলবাড়ী পৌরবাসীর কাছে এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।
জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলা প্রধান ডাকঘরটি ফুলবাড়ী পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন স্বজনপুকুর এলাকায়। ডাকঘরটি উপজেলা পরিষদ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে হওয়ায় নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউই ডাকঘরে যেতে চান না। আর জরুরি প্রয়োজনের তাগিদে যাদের ডাকঘরে যেতে হয় তাদের যাতায়াত বাবদ খরচ গুনতে হয় ৪০ টাকা। এ সুযোগে পৌরশহরের বিভিন্ন পান-বিড়ির দোকানসহ বেশ কিছু মনিহারি ও ফটোকপির দোকানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডাক বিভাগের খামসহ রাজস্ব টিকিট।
ফুলবাড়ী শাখা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কিছু কিছু সরকারি কাজের জন্য ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠিপত্র পাঠাতে হয়। কিন্তু ডাকঘরটি শহর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হওয়ায় যাতায়াত করতে গিয়ে বাড়তি খরচ হয়ে যায় ৪০ টাকা। এজন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য চিঠিপত্রগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়। পৌরশহরের জনবহুল এলাকায় একটি শাখা ডাকঘর স্থাপন করা গেলে সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় হতো।
ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চন্দ্রনাথ গুপ্ত বলেন, চিঠিপত্র আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এখনো ডাক বিভাগ মানুষের কাছে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। আশির দশক থেকে উপজেলা সদরে ডাকঘরের একটি শাখার জন্য ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা লেখালেখি করে আসছেন। ডাকঘরটি কাছাকাছি না থাকায় বাধ্য হয়ে গণমাধ্যমকর্মীসহ ব্যবসায়ী, ব্যাংক, বিমাসহ সাধারণ মানুষ অধিক অর্থ ব্যয় করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের চিঠিপত্র পাঠান। ডাক বিভাগের জনকল্যাণকর নানামুখী সেবা থাকলেও শুধু জনবহুল এলাকায় ডাকঘরের শাখা না থাকায় উপজেলার ৯৫ ভাগ মানুষই ডাক বিভাগের সেবা সম্পর্কে জানতে পারছেন না।
তবে ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ এলাকায় একটি শাখা ডাকঘর স্থাপন করা হলে সরকারের যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে, তেমন সাধারণ মানুষও স্বল্প ব্যয়ে তাদের চিঠিপত্র আদান-প্রদানসহ ডাক বিভাগের নানামুখী সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মাহাবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, শুনেছিেএর আগে ফুলবাড়ী পৌরশহরে একটি শাখা ডাকঘর স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কিছু কাজ হয়েছিল। কিন্তু ঘর না পাওয়ায় শাখা ডাকঘরের কার্যক্রম চালু করা যায়নি।
ইউএনও মীর মো. আল কামাহ তমাল কালবেলাকে বলেন, ডাক বিভাগের জরুরি সেবা সবার কাছে পৌঁছে দিতে উপজেলা পরিষদ এলাকায় শাখা ডাকঘর স্থাপনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।