27 C
Dhaka
Friday, July 5, 2024

সৌদি আরবে এত হজযাত্রীর মৃত্যু কেন?

সৌদি আরবে প্রতি বছরই হজ পালনে গিয়ে মৃত্যু হয় অনেকের। সাধারণত এর বেশিরভাগই হয় বার্ধক্যজনিত কারণে। তবে চলতি হজ মৌসুমে বহু মানুষের মৃত্যুর খবর মিলছে। গেলো কয়েকদিনের অস্বাভাবিক গরম বড় প্রভাব ফেলেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় এ সমাবেশে। ধারণা করা হচ্ছে, তীব্র তাপপ্রবাহই শত শত মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ মুখ না খোলায়, এ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই আরব কূটনীতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, চলতি বছর হজ পালনে গিয়ে শুধুমাত্র মিশরেরই ৩২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে; যার বেশিরভাগই তাপজনিত অসুস্থতার কারণে।

মিশর সরকরিভাবে মৃতের সংখ্যা না জানালেও, অন্য দেশ যাদের নাগরিকরা পবিত্র নগরী মক্কায় ছুটে গেছেন, তারা কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে হজ পালনে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ১৩৮ জন, জর্ডানের ৪১ জন এবং তিউনিসিয়ার ৩৫ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩২ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে মক্কা থেকে সংস্থা এপি জানায়, হজে গিয়ে এ বছর মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে এবং নিখোঁজ প্রিয়জন সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন অনেকে। যদিও মৃতের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে কতজন গরমের কারণে, তা স্পষ্ট নয়।

আরো পড়ুন  যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৩’শ কোটি টাকার ড্রোন ভূপাতিত করল হুতিরা

এবার হজ শুরু হয়েছিল ১৪ জুন থেকে। হজের আনুষ্ঠানিকতা চলে পাঁচদিন। এ সময়ে মক্কায় অস্বাভাবিক তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়েছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, একপর্যায়ে সেখানে তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ফারেনহাইটে পৌঁছেছিল। হজে অংশ নেন ১৮ লাখের বেশি মানুষ।

সৌদি আরবে কর্মরত এবং হজে অংশ নেয়া আহমদ বাহা (৩৭) নামে মিশরের একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘এই সংখ্যা (মৃতের) অনেক বেশি। আমদের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।’

মক্কার কিছু ঘটনাকে ‘চমকে যাওয়ার মতো’ বলেও বর্ণনা করেছেন বাহা। তিনি জানান, তীব্র গরমের সময়েও অনেকে বিশেষ করে অনিবন্ধিত হজযাত্রী বা যাদের পারমিট নেই, তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুসহ অন্যান্য পরিষেবার সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হয়েছে।

প্রতি বছর প্রতিটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জন্য কোটাসহ নির্দিষ্ট সংখ্যক হজযাত্রীর ভিসা অনুমোদন করে সৌদি আরব। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্দিষ্ট ভিসা না নিয়েই বহু মানুষ বিভিন্ন উপায়ে হজে অংশ নেন।

আরো পড়ুন  ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা এখন ১৪৫

লোহিত সাগর থেকে আসা আর্দ্র বাতাসে প্রভাবিত একটি শহর মক্কা। আর এ মৌসুমে হজ পালনে যারা সেখানে যান, তাদের বড় অংশই বয়স্ক। আঁটসাঁট অবস্থায় পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই তাদের কাটাতে হয় বাইরে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছর বিশ্বের কিছু অংশ যে পরিমাণ উষ্ণ হয়েছে, তা মানুষের জন সহনশীল নয়। সৌদি আরবেও তীব্র গরম প্রাণঘাতী হয়ে ওঠেছে। যদিও ঝুঁকি কমাতে এক লাখেরও বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু স্থাপন, পানি এবং ছাতা বিতরণ, গাছ লাগানো এবং তাপজনিত অসুস্থতার প্রতিক্রিয়া জানাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য চলতি বছর সৌদি-ভিত্তিক গবেষকদের প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পদক্ষেপ সহায়ক হলেও ক্রমবর্ধমান তাপের মুখে বর্তমান প্রশমন ব্যবস্থাগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশের মতো মক্কাতেও বিপজ্জনকভাবে গরম দিনের সংখ্যা বাড়ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কার্বনপ্ল্যান পরিচালিত এক বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০৫০ সাল নাগাদ মক্কায় আনুমানিক ১৮২ দিন সূর্যের বিপজ্জনক তাপ থাকবে। এর মধ্যে ৫৪ দিন এমন তাপ থাকবে, যখন ছায়ায় থাকলেও মানুষের জন্য তা ঝুঁকির কারণ হবে।

আরো পড়ুন  ৫০ দেশের ৩ কোটি প্রতিযোগীকে টপকে সেরা হলেন ফয়সাল

এ বিশ্লেষণের ধারণা সত্যি হলে, মক্কা হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে কম অতিথিপরায়ণ এবং বাসযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে একটি।

২০১৯ সালে হজের সময় প্রচণ্ড তাপ নিয়ে করা এক সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, ‘গত ৩০ বছরে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি একটি উল্লেখযোগ্য উষ্ণতা বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে।’

এর আগের এক গবেষণা অনুসারে, ১৯৮৫ সালে হজ মৌসুমে এক হাজারের বেশি মানুষ হিটস্ট্রোকে মারা গিয়েছিল।

এদিকে চলতি হজ মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মৃতের সংখ্যা জানায়নি সৌদি আরব। যদিও দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাপপ্রবাহ এবং সানস্ট্রোকের বহু ঘটনার তথ্য জানিয়েছে।

বুধবার (১৯ জুন) সৌদির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানায়, এবারের হজ ‘সফল’ হয়েছে। কারণ নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সব পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ