বুধবার (৩ জুলাই) ভোর সাড়ে ছয়টা। সুনামগঞ্জের সাহেববাড়ি ঘাট এলাকায় নোঙর করা হাউসবোটে কয়েকজন পর্যটক বসে ভোরের গল্পে মশগুল ছিলেন। ভেতর থেকে অনেক কথা বার্তা শোনা যাচ্ছিল। হঠাৎ চোখে পড়ে পর্যটকদের হাউস বোটটি পেছন থেকে প্রপেলারের হোজ পাইপ দিয়ে পানি উঠে সুরমা নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে।
একপর্যায়ে এ দৃশ্য দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা পর্যটকদের মালামাল নিয়ে নৌকা থেকে বেরিয়ে আসতে বললে তারা ২ মিনিটের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে লাগেজ ব্যাগ পানির বোতল মোবাইল ইত্যাদি নিয়ে ঘাটের সিঁড়িতে উঠে আসেন। পর্যটকদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও চার জন নারী ছিলেন। তারা ভিডিও করতে ও কথা বলতে নিষেধ করেন। পর্যটকরা নৌকা থেকে বেরিয়ে আসার পর নৌকার প্রধান মাঝিকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে ডেকে নৌকা ডুবে যাওয়ার কথা বলা হয়। এক পর্যায়ে নৌকায় থাকা আরও দুই মাঝির মধ্যে হাউসবোটের পানি নিষ্কাশন নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
তারা একে অন্যকে নিষ্কাশনের কথা বলে বিতর্ক করছিলেন। এক পর্যায়ে প্রধান মাঝি পাশের একটি হাউসবোট থেকে বহনযোগ্য সেচ মেশিন নিয়ে আসেন। নৌকার সামনে সেচ মেশিন রেখে ভিতরে মেশিনের পাইপ প্রবেশ করার পর প্রধান মাঝি বুঝতে পারেন, সেচ মেশিনের পেট্রোল নেই। তখন ২ লিটার পেট্রোল যোগাড় করতে গিয়ে আবার দুই মাঝির মধ্যে কথা হলে কাল ক্ষেপণ হয়। উভয়ের মধ্যে কথা বলার সময় দৃষ্টিনন্দন সুসজ্জিত হাউসবোটটি মাত্র ৩৯ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে সুরমানদীর তীরে নোঙর করা অবস্থায় ডুবে যায়।
ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখে হাউসবোটের ইঞ্জিন চালককে নৌকার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় জাগিয়ে তোলা হয়। ইঞ্জিনচালক ১০ সেকেন্ড সময় পরে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল ও চার্জার নিয়ে নৌকার সামনে আসার পর নৌকার সিঁড়ি নদীতে পড়ে যায়, নৌকাটি বাম দিকে কাত হয়ে পানিতে ডুবে যায়। ইঞ্জিনচালক সেসময় লাফ দিয়ে ঘাটের সিঁড়িতে ওঠে নিজের জীবন রক্ষা করে। নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর প্রবল স্রোতে নদীর গভীরে চলে যেতে শুরু করে।
এক পর্যায় প্রধানমাঝি ঘাটে পুঁতে রাখা বাঁশের খুঁটিতে নৌকা বেঁধে রেখে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। পরে নৌকার কেবিনে থাকা বিছানাপত্র ডেকোরেশন আইটেম উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। ওইদিন বুধবার বিকেলে নৌকার মালিক এসে নৌকাটি উদ্ধার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা পুরো ঘটনার এ বর্ণনা দিয়েছেন।