মাথায় পুলিশের হেলমেট। সাদাপোশাকের ওপর পুলিশের ভেস্ট পরা এক ব্যক্তি আরেকজনের সহায়তায় চ্যাংদোলা করে নিথর এক যুবকের দুই হাত ধরে ভ্যানের ওপর তুলছেন। ভ্যানের ওপর আরও কয়েকটি নিথর দেহ স্তূপ করে রাখা। দেহগুলো থেকে ঝরে পড়া রক্তে ভিজে গেছে সড়কের কিছু অংশ। বিছানার চাদরের মতো একটি চাদর দিয়ে তাদের ঢেকে রাখা হয়েছে। পাশেই পুলিশের হেলমেট, ভেস্ট পরা আরও কয়েকজনকে দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি সাভারের আশুলিয়া থানা-সংলগ্ন এলাকার বলে দাবি করেছেন অনেকে।
ভিডিওতে লাশের স্তূপ করতে ব্যস্ত এক পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। তিনি হলেন- ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজালা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের বদরটুনি গ্রামে। প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়াশোনা করেন।
আরাফাতের বাবা মো. আরিফ হোসেন বদরটুনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তার মুঠোফোনে একাধিকবার গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানায়, নিথর দেহের স্তূপের বহুল আলোচিত ভিডিওটি আশুলিয়া থানা সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। গত ৫ আগস্ট বিকেলে ওই ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকেন এমন দুইজন দাবি করেন, ভিডিওর দেয়ালে যার পোস্টার দেখা যায় তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভূঁইয়া। জানা গেছে, দেয়ালের এই পোস্টার এখন আর নেই। গত ৫ অগাস্টের পরপরই সব দেয়ালে নতুন রঙ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতা আশুলিয়া থানার সামনে জড়ো হয়। পরে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ফলে আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। পরে পুলিশ নিহতদের একটি ভ্যানে করে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। এমনকি পুলিশের একটি গাড়িতেও কয়েকজনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সেদিন একপাশে আন্দোলনকারীরা অন্যপাশে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজন মারা যান। এরপর বেশ কয়েকটি মরদেহ একটি ভ্যানে তোলে পুলিশ। কিছু সময় পরই সেসব মরদেহ পুলিশের গাড়িতে দেখা যায়। তখন মরদেহসহ সেই গাড়িটি আগুনে জ্বলছিল।
ঢাকা জেলা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ রিয়াজ উদ্দিন বিপ্লব গণমাধ্যমকে বলেন, ভিডিওটি অস্পষ্ট। তবে আরাফাত হোসেন আমাদের ঢাকা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
আরাফাত ৫ আগস্ট কোথায় ডিউটি করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, গোয়েন্দা পুলিশরা সাভার থানায় ডিউটি করেছেন। কিন্তু আরাফাত সেদিন কোথায় ডিউটি করেছেন, সেটি তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।