রাত তখন প্রায় দেড়টা। লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রিন লাইফ ফিলিং স্টেশনে সিএনজি অটোরিকশাচালক ইউসুফ হোসেন নিজের গাড়িতে গ্যাস লোড নেওয়ার জন্য যান। সিএনজিটি লাইনে অপেক্ষমাণ রেখে নিজে গ্যাসের ভাউচারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে চলাচলকারী মেঘনা পরিবহনে গ্যাস লোড দেওয়ার পরেই তার সিএনজিতে গ্যাস লোড দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ বাসে গ্যাস লোড দেওয়ার সময় বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইউসুফের মাথার খুলি উড়ে যায় ২০ গজ দূরে। মাথার মগজ ঝুলে থাকে ফিলিং স্টেশনের ফ্লোর ও বাউন্ডারি দেয়ালে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) রাতে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গ্রিন লাইফ ফিলিং স্টেশনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন।
এই ঘটনায় ইউসুফসহ তিনজন নিহত হয়। আহত হয় আরও অন্তত ২০ জন। তারা সবাই সিএনজি অটোরিকশাচালক ও স্টেশন কর্মী। ঘটনার পর খবর পেয়ে রাতেই ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে ও আহতদের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিন সকালে গ্রিন লাইফ ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, এখানে সেখানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পড়ে আছে। বাউন্ডারি দেয়ালে মাথার মগজ ঝুলে আছে। ঘটনাস্থলের ২০ গজ দূরে ফিলিং স্টেশনের বাউন্ডারির ভেতরে এক জায়গায় ছোট কয়েক টুকরা খুলির কণা পড়ে আছে। কোন এক দুর্ভাগার হাতের কুনুইয়ের একটি রক্তমাখা বাটিও দেখা গেছে। স্থানীয় উৎসুক জনতা একনজর দেখার জন্য ভিড় জমিয়ে রেখেছে ফিলিং স্টেশনে।
ওই ফিলিং স্টেশনের সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা মো. শিমুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, সিএনজি অটোরিকশাচালক ইউসুফকে আগে থেকেই চিনতাম। তার বাড়ি পাশেই বাঞ্ছানগর এলাকায়। তিনি প্রতিদিন এখানে গ্যাস ভরতে আসত। ঘটনার সময়ও তিনি এসেছিলেন সিএনজিতে গ্যাস ভরতে। কিন্তু কি থেকে কী হয়ে গেল মুহূর্তে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই তার খুলি উড়ে গিয়ে ২০ গজ দূরে পড়ে। ঘটনার সময় আমি একটু দূরে ছিলাম। দৌড়ে গিয়ে দেখি ইউসুফ মস্তকবিহীন পড়ে আছে। দেখে মনে খুব ভয় এসে গেল। লোকটা খুব ভালো ছিল। আমরা তাকে জুম্মন মিয়া বলে ডাকতাম।
সাইফুল ইসলাম নামে স্থানীয় একজন বলেন, ঘটনার পরই আমরা ছুটে যাই। এক অবর্ণনীয় বিভৎস দৃশ্য। কারও মগজ পড়ে আছে এখানে-সেখানে। তাদের কয়েকজনের হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাতেই পুলিশ নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে এদিক সেদিক পড়ে থাকা দেহের খণ্ডাংশগুলো তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। বিস্ফোরণের এমন ভয়াবহ ঘটনা তিনি এর আগে কখনো দেখেননি বলে জানান।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রঞ্জিত কুমার কালবেলাকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পৌঁছে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি নিম্নমানের ছিল। এতে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডারটি বিস্ফোরণ ঘটে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জয়নাল আবেদিন কালবেলাকে বলেন, তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। তাদের আমরা চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ পাইনি। আহত আছেন ২০ জনের মতো। এর মধ্যে ১০ জনেরই কারো হাত, কারো পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়েছে। আমরা অধিকাংশ রোগীকেই ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি।