প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কথা বলছেন। সংস্কার করুক, তবে এটা যেন উপসংহারহীন না হয়। একটা ইতি টানতে হবে, এটা যদি অনন্তকাল চলতে থাকে, তাহলে প্রশ্ন দেখা দেবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরের দিকে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের বাসা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাভারে হতাহত ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তিনি। এ সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতদের সহায়তা করতে গঠিত ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ও আহতদের ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। সাভারের ৮টি পরিবারকে এসব অনুদান দেয় বিএনপি।
রুহুল কবীর রিজভী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। আপনারা নির্বাচন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং জনপ্রশাসন নিয়ে যে কমিশন করেছেন সেগুলো যাতে দ্রুত কাজ করে। দ্রুত রিপোর্ট দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সংস্কারের মূল কাজ করবে গণতান্ত্রিক দল। যারা গণতন্ত্রের জন্য গত ১৫ বছর সংগ্রাম করেছে তাদের করতে হবে। সেটি দেরি করলে আন্দোলনের মূল স্পিরিট বাধাগ্রস্ত হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া, তাদের পাশে থাকা ও সবসময় খোঁজখবর নেওয়ার জন্য একটি সংগঠন করে দিয়েছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। সেটির নাম ’আমরা বিএনপি পরিবার’। এটার উদ্দেশ্য জুলাই মাস থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা নরহত্যা চালিয়ে প্রায় দেড় হাজারের মতো মানুষ খুন করেছে। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কলেজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আত্মদানের মধ্য দিয়ে আমরা আজকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি। তাদের সহায়তা করছি।
তিনি আরও বলেন, আগে কি হতো? পরিশেষে ছত্রভঙ্গ করে দিত। এই একটা অবদান মুক্তির সুবাতাস নিচ্ছি। যাদের জন্য তাদের পাশে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল যারা ১৬ বছর ধরে লড়াই করেছে তারাইতো আন্দোলনের চূড়ান্ত পটভূমি রচনা করেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা সবখানে যাচ্ছি। যেখানে যেখানে আহত নিহত আছে তাদের দেখতে যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা বিএনপি পরিবার সারা দেশে সবার কাছে যাচ্ছি। তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। তাদের খোঁজ নিচ্ছি দেশনায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আপনাদের সামনে রেখে আমাদের একটাই কথা আছে, তা হলো, এখনো সেই ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা তাদের কালো টাকা ও বেআইনি অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা গোলাগুলি করেছে, অস্ত্র নিয়ে তারা সেখানে গুলি করেছে। এই যে জনঅরণ্যের মধ্যে তারা যে লুকিয়ে আছে এবং প্রয়োজন মতো তারা দেশটাকে অস্থিতিশীল করবে।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বারবার আমরা চাপ দিয়েছি। আপনাদের কোনো ব্যর্থতার জন্য যদি ফ্যাসিবাদের পুনর্জীবন ঘটে এর দায় আপনাদের সবার। এত আত্মত্যাগ, এত শহীদ তাদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলছি, আপনারা কেন বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছেন না। কেন আপনারা যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সেগুলো বাতিল করে দুবৃত্ত যারা অস্থিতিশীলতা ঘটাচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করে শান্তি ফিরিয়ে আনছেন না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী সব দল তো আপনাদের সমর্থন করেছে, আমরা প্রতিমুহূর্তে আপনাদের দূবৃত্তদের বিরুদ্ধে আপনাদের প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করছি, পাশাপাশি আমরা আরও বলেছি, মানুষ না খেয়ে থাকে এই পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয়। মানুষ যাতে দুমুঠো খেতে পারে এ জন্য বাজার, মার্কেট সিন্ডিকেটে যারা যারা এত দিন ধরে এমন করে রেখেছে তাদের গ্রেপ্তার করুন। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।
তিনি আরও বলেন, আমরা অল্প কিছু প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ব্যাপক প্রচেষ্টা আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্র শান্তির পক্ষে যাতে মানুষ বসবাস করতে পারে, খোলা গলায় যাতে মানুষ সমালোচনা এবং কথা বলতে পারে। কে কোন দল করে সেটা বড় কথা নয়। যে অপরাধ করবে পুলিশ তাকে ধরে তাদের বিচারের আওতায় আনবে৷ এটাই তো গনতন্ত্র।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বড় একটা উপাদান। সেখানেও আমরা বিভিন্ন কথা দেখছি। আনুপাতিক নির্বাচনসহ অমুক-তমুক পদ্ধতির কথা আসছে। না আপনারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। ভোটাররা যারা ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি তাদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তারা যাতে পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে এটিই গণতান্ত্রিক পরিবেশ। এটি নিশ্চিত করাই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব। সেটা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে মানুষ সত্যিকার বুঝবে। এই যে এত আত্মদান, আবু সাঈদ, ইয়ামিন, নাফিসা এদের আত্মদান বৃথা হয়ে যাবে। যদি সেটি আমরা নিশ্চিত না করতে পারি। সত্যিকার গণতন্ত্রের পুনরুত্থান ও পুনর্জীবন করতে হবে। সেটির চর্চা করতে হবে, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সেটির বিকাশ ঘটাতে হবে।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান কাজ করে যাচ্ছেন। তার নির্দেশে আজকে এ আন্দোলনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা শটগানের গুলিতে বা যুবলীগ, ছাত্রলীগের গুলিতে যারা হাত হারিয়েছে, পা হারিয়েছে, অন্ধ হয়েছে তারা যেন কেউ বা তাদের পরিবার যেন হতাশায় না থাকে। তাদের খোঁজ-খবর নিতে যতটা সম্ভব তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাদের বাসায় যাচ্ছি। দেশনায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সহায়তা করছি।
এদিকে অনুদান পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শহীদদের স্বীকৃতির জন্য বিএনপিকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন বলেন, যে অনুদান পেয়েছি, সেটি আমরা আমার ছেলের নামে গঠিত ফাউন্ডেশনে দিব। তবে এই আর্থিক অনুদানের চাইতেও শহীদদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
একই কথা বলেন শহীদ নাফিসা হোসেন মারওয়ার মা কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, বিএনপির রুহুল কবীর রিজভী আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাকে বলেছি, আমাদের সন্তানদের যেন তারা ভুলে না যান। তাদের আত্মত্যাগ যাতে সবাই মনে রাখেন।
সরকার পতনের আন্দোলনে হতাহতদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এক শতাধিক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা আরও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে সবার পাশে দাঁড়াবে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় বিএনপিরসহ পরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন, শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, আহতদের চিকিৎসা সেবা ও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পেতেও বিএনপি তাদের পাশে থাকবে।