28 C
Dhaka
Monday, July 1, 2024

সাজাপ্রাপ্ত হয়েও তিনি পৌর মেয়র

২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চট্টগ্রাম জেলার বারইয়ারহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মোহাম্মদ রেজাউল করিম খোকন। নির্বাচিত হওয়ার মাত্র আড়াই বছরেই তিনি জড়িয়েছেন নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। এ ছাড়া মেয়র নির্বাচিত হয়েই আত্মীয়স্বজন এবং নিজের অনুসারী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়া এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। একটি মামলায় ১ বছরের সাজাও হয়েছে তার। পুলিশের খাতায় পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে আদালত জারি করেছেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। যদিও রেজাউল নিয়মিত অফিস করেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন রেজাউল। ফলে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। এর মধ্যে একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তার এক বছরের সাজা হয়। স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন-২০০৯ অনুযায়ী কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন।

আইনের ৩২ নম্বর ধারায় ‘মেয়র ও কাউন্সিলর অপসারণ’ শর্তের (ঘ) উপধারায় বলা হয়েছে, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি মেয়র পদ থেকে অপসারিত হবেন। তবে এসব নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও রেজাউল মেয়র পদে বহালতবিয়তে রয়েছেন। পৌর মেয়র হিসেবে নিয়মিত অফিস করলেও পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক আসামি। পলাতক থাকা অবস্থায় গত বছরের ২১ ডিসেম্বর তার ১ বছরের সাজার রায় ঘোষণা করেন আদালত।

আরো পড়ুন  লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েব, যা বলল ইসলামী ব্যাংক

রায়ে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪২৭ ধারায় আনা অভিযোগ সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হলো। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আসামিকে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হোক।

এ ছাড়া গত বছরের ২৮ মে বারইয়ারহাট পৌরসভার ১২টি শূন্যপদে জনবল নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এসব শূন্যপদে কোনো ধরনের নিয়ম-কানুন না মেনে নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মী এবং আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দেন পৌর মেয়র।

এদিকে বারইয়ারহাট পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে দুর্নীতি এবং অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্তে। জানা গেছে, বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনের জন্য মোহাম্মদ রেজাউল করিম ১৬৪ শতাংশ জায়গা কেনেন সরকারি অর্থে। পৌরসভা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গহিন পাহাড়ে এ জায়গা কেনা হয়। বর্ষার সময় এই জায়গা গাড়ি চলাচলের একেবারে অনুপযুক্ত। এ ছাড়া এই জমি মাত্র ১৫ লাখ টাকায় কেনা হলেও সরকারি ফান্ড থেকে তিনি নিয়েছেন প্রায় ৯৬ লাখ টাকা। এসব টাকা তিনি নিজের নামে পে-অর্ডার করে নিয়েছেন।

আরো পড়ুন  সরকারি হাসপাতালে অনুমোদনহীন ক্যান্টিন-ফার্মেসি বন্ধের নির্দেশ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় গত ১৩ মার্চ উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয় পৌর মেয়র রেজাউলকে। এতে বলা হয়েছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রাপ্তির আগেই জমি ক্রয় করা, জমির মালিকানা-সংক্রান্ত কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই না করা এবং প্রস্তাবিত জমির বাজারমূল্যের চেয়ে মৌজা মূল্য বেশি হওয়ার পরও মৌজা মূলে ওই জমি ক্রয় করায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন- ২০০৯ অনুযায়ী কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এ বিষয়ে আগামী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুবোধ করা হলো।

আরো পড়ুন  দোকান মালিককে ফিল্মি স্টাইলে গুলি!

জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন বারইয়ারহাট পৌর মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম খোকন। মামলার বিষয়ে বলেন, আমি এই বছরের ১৪ জানুয়ারি কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আপনি কে, আপনি কি প্রশাসনের লোক? আমি কি আপনার কাছে জবাব দিতে বাধ্য? আপনি কথা এত প্যাঁচান কেন? সোজা কথায় প্রশ্ন করবেন সোজা কথা উত্তর দেব। আপনি নির্দোষ হলে কোর্ট আপনাকে শাস্তি দিল কেন; আবার মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিলল কীভাবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা কীভাবে পেল ওইটা আপনে তাদের জিজ্ঞেস করেন। আপনি আবার কথা প্যাঁচাইতাছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বারইয়ারহাট পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ওঠা অধিকাংশ অভিযোগেরই প্রমাণ মিলেছে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে। তার বিরুদ্ধে হওয়ায় মামলার কপি চেয়ে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। সব তথ্য-প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বিধি অনুযায়ী তাকে অপসারণ করা হতে পারে।

সর্বশেষ সংবাদ