ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ। তবে এখনও আনারের মরদেহের কোনো খোঁজ মেলেনি।
এ অবস্থায় শুক্রবার দিবাগত রাতে (২৫ মে) বাবার মৃত্যুর সময়ের কষ্ট ও যন্ত্রণার কথা উল্লেখ করে এক পোস্ট দিয়েছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
বাবার মৃত্যুযন্ত্রণার কথা উল্লেখ করে ডরিন লিখেন, ‘যখন তার শ্বাসরোধ করছে, সে তো আমার আব্বু, আমি জানি সে চেষ্টা করেছে হয়তো বাঁচার। তখন তারা তো কয়েকজন ছিল, আমার আব্বু আর চেষ্টা করেও পারেনি। আমার আব্বু বুঝে ছিল, শিওর যে আমি এখনই মরে যাবো, তখন অনেক কষ্ট হচ্ছিল আমার আব্বুর। চোখ দিয়ে তখন অঝোরে পানি পড়ছে, আমি সন্তান আমি বুঝতে পারি।’
পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমার যে অনেক কষ্ট হয়, আমি সহ্য করতে পারি না। তোমার চোখের পানি, আহারে আহারে আমার বুকটা ফেঁটে যায়। এখনই মরে যাবো একজন মানুষ বুঝতে পারলে, কতটা তার কষ্ট হতে পারে, সেটা বলার না।’
এদিকে শুক্রবার (২৪ মে) বিকেলে এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচার, হত্যার পরিকল্পনাকারীকে আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ডরিন বাবার এক টুকরো মাংস চেয়েছেন ছুঁয়ে দেখার জন্য।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার লাশের এক টুকরো মাংস চাই। যে মাংসের টুকরো ছুঁয়ে দেখতে পারি। সেই মাংসের টুকরোকেই বাবা মনে করে জানাজা করাতে চাই।’
আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড বলা হচ্ছে তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহিনকে। ঝিনাইদহের কোর্ট চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমের ভাই তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শাহিন কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের ৫৬বিইউ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়ার কথা স্বীকার করলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তার দাবি, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তাই তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে, গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অভিযোগে গ্রেফতার সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাহাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন দেশের আদালত। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন ভারতের বারাসাতের আদালত।