ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এবার কানাডার সেনাবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করছে তেহরান। রোববার (২৩ জুন) ইরানি পার্লামেন্টে এ মর্মে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।
প্রস্তাবটি পাস হলে ইরান সরকার কানাডার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি দেশটির সরকারের সাথে যুক্ত সশস্ত্র ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে বাধ্য থাকবে।
ইরানে আইআরজিসিকে একটি অভিজাত বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে এই বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
আইআরজিসির প্রায় দুই লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছে। শুধু ইরানে নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই আইআরজিসির প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন মিত্রদেশের সরকারসহ তেহরানপন্থি সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে তারা অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েও সহায়তা করে।
কুদস ফোর্স নামে আইআরজিসির একটি শাখা আছে। এই শাখার মাধ্যমে দেশের বাইরে অভিযানসহ তৎপরতা চালায় ইরান। কুদস ফোর্সকে আগেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে কানাডা। বেশ কয়েক বছর ধরে কানাডার বিরোধী আইনপ্রণেতা ও প্রবাসী ইরানিদের দাবির মুখে এমন পদক্ষেপ নেয় দেশটি।
গত সপ্তাহে অভিজাত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরকে (আইআরজিসি) ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দেশটি। গত বুধবার (১৯ জুন) কানাডার জননিরাপত্তা–বিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঙ্ক এই ঘোষণা দেন।
লেব্লাঙ্ক এই পদক্ষেপকে ‘বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি তাৎপর্যপূর্ণ হাতিয়ার’ বলে বর্ণনা করেন। এই পদক্ষেপের ফলে আইআরজিসির কর্মকর্তাসহ ইরান সরকারের হাজারো সিনিয়র কর্মকর্তা কানাডায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
ইরান সরকার কানাডার এই পদক্ষেপকে একটি ‘অবিবেচক’ ও ‘রীতিবিরুদ্ধ’ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানায়। তবে শুধু নিন্দা জানিয়েই বসে থাকছেন না ইরানি রাজনীতিকরা। কানাডার বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের পথে হাটছেন তারা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, রোববার পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালে ২৫০ সাংসদ এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। তাতে আইআরজিসিকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়টিকে কানাডা সরকারের ‘শত্রুতামূলক’ পদক্ষেপ অভিহিত করে নিন্দা জানানো হয়।
ইরানি আইনপ্রণেতারা আইআরজিসির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ব্যক্ত করেন। তারা কানাডা সরকারের পদক্ষেপকে ‘অবিবেচনাপূর্ণ ও সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিবিধানের পরিপন্থী’ বলে বর্ণনা করেন এবং ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এর বিরুদ্ধে তার সমস্ত রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক কৌশল ব্যবহার করার আহ্বান জানান।