সাদিক অ্যাগ্রো বিটল জাতের ছাগল দাবি করে যেটি ১২ লাখ টাকায় বিক্রির চুক্তি করেছিল, আসলেই কী সেই ছাগলের দাম এতো টাকা? অভিযোগ আছে, যশোর থেকে মাত্র এক লাখ টাকায় ছাগল কিনে তা ১৫ লাখ টাকা দাম চায় সাদিক অ্যাগ্রো। ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে এসব ছাগল দেশে নিয়ে আসা হয়।
দেশের পশুর বাজারে সাদিক অ্যাগ্রো একটি বড় সিন্ডিকেট- কয়েক বছর ধরে সেটি আলোচনায় ছিল। এবার কোরবানির ঈদের আগে উচ্চ বংশীয় কোটি টাকা দাম চাওয়া গরু আর ১৫ লাখের ছাগল নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। এরমধ্যে ১২ লাখ টাকায় সেই ছাগল কেনার চুক্তি করে আলোচনায় আসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত। এরপরই মতিউরের অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি প্রকাশ পেতে শুরু করে।
ঘটনা সেখানেই থেমে নেই। উচ্চ বংশীয় গরু আর ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে যায় সাদিক অ্যাগ্রোও। এই ফার্মের মালিক ইমরান কীভাবে এসব পশু সংগ্রহ করেন, তার খোঁজে নামে সংবাদমাধ্যম। তাতেই বেরিয়ে আসে প্রতারণার নানা বিষয়।
সাদিক অ্যাগ্রো যে ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা চেয়েছে, গায়ের বর্ণ আর দেখতে প্রায় একই রকম, একই জাতের ছাগলের দেখা মিলেছে যশোরের খামারে। ভারতের রাজস্থান থেকে আসা তোতা জাতের এসব ছাগল যশোরের বিভিন্ন খামারে পালন করা হয়। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা হয় এসব ছাগল।
স্থানীয় খামারিদের দাবি, এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয় এসব ছাগল। তাতে আলোচিত ছাগলটি এক লাখ টাকায় কেনার অভিযোগ আরও পোক্ত হয়।
এদিকে, সাদিক অ্যাগ্রোর সাথে দীর্ঘদিনের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক খুলনা অ্যাগ্রোর মালিক আরিফ খানের। বিভিন্ন সময়ে সাদিক অ্যাগ্রোকে ছাগল সরবরাহ করেছেন তিনি। ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা ছাগল সংগ্রহ করেন তিনি। সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ছাগল বিক্রি করেছেন।
আরিফ খান বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রোর সাথে আমার ব্যবসায়ীক সম্পর্ক পুরোনো। আমার খামারের ছাগল তাদের পছন্দ হলে তারা আমার কাছ থেকে কিনে নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমি ছাগল সংগ্রহ করি। সীমান্ত দিয়ে এসব ছাগল দেশে আনার পর আমাদের কাছে খবর আসলে আমরা সেসব ছাগল সংগ্রহ করার চেষ্টা করি।’
তবে আলোচিত ছাগলটি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
এদিকে, প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, কোরবানির সময় দাম নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকলেও দেশি-বিদেশি যাই হোক না কেন, ছাগলের মূল্য এতো হতে পারে না। বিভিন্ন লোভনীয় বিষয় দেখিয়ে গরু-ছাগল বিক্রি কোরবানির পশুর হাটে অস্থিরতা তৈরি করে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হন সাধারণ খামারীরা।
প্রাণিসম্পদ খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. জাকির হোসেন বলেন, মাংসের দাম বিবেচনায় কখনও একটা ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা হওয়ার সুযোগ নেই। যে দেশের আর যে জাতেরই হোক, মাংসে এমন কোনো পুষ্টিগুণ নেই যার জন্য কোনো ছাগলের দাম এত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযানের পরে আলোচিত ছাগলটি সেখান থেকে সরিয়ে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানা গেছে।