29 C
Dhaka
Monday, July 8, 2024

পরিত্যক্ত সবজি থেকে পলিথিন, কলাগাছের তন্তু থেকে প্লাস্টিক তৈরি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ক্ষুদে বিজ্ঞানী সাজ্জাদুল ইসলাম কলা গাছের তন্তুকে বিশেষায়িত করে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরির ফরমুলা আবিস্কার করেছে।

একই সঙ্গে সে পঁচা বা অব্যবহৃত সবজীর শেতসার থেকে তৈরি করেছে পঁচনযোগ্য পলিথিন। তার দাবি এটি পরিবেশ বান্ধব এবং অনেকটা সাশ্রয়ী।

পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের জন্য সে ব্যবহার করেছে বাজারের পরিত্যাক্ত সবজি থেকে সংগ্রহকৃত শেতসার, অ্যাসিটিক এসিড ও গ্লিসারল। মোট দ্রবনের ২৫ শতাংশ গ্লিসারল ২৫ শতাংশ এসিটিক এসিড ও ২৫/৩০ শতাংশ পানি ও বাকিটা সবজির শেতসার।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ফল ও সবজি অপচয় হয়। এ অপচয়কৃত শস্য থেকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার যোগ্য পণ্য তৈরি করা হলে দেশের অর্থনীতিতে আসতে পারে বড় একটা পরিবর্তন এবং কমে আসবে পরিবেশ দূষণ। আর কলাগাছ যেহেতু একবার ফল দেয়ার পর কেটে ফেলে দিতে হয়। তাই কৃষককে অল্প মুল্য দিয়ে তা সংগ্রহ করে এটা দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে।

ইতোপূর্বে সাজ্জাদুল ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪’ এ মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সে জানায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে তার গবেষণা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

আরো পড়ুন  চাকরি শেষের দুই মাস আগে এসএসসি পাস করলেন পুলিশ সদস্য ছামাদ

সাজ্জাদুলের বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। তার বাবার পক্ষে তার গবেষণার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাই তার এ কাজের উৎসাহ অর্থনৈতিক কারণে সামনের দিকে এগুচ্ছে না। এ মেধাবী ক্ষুদে বিজ্ঞানীকে সরকার কিংবা হৃদয়বান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্টান পৃষ্টপোষকতা করলে তার দ্বারা ভালো কিছু আবিস্কার আশা করেন তার শিক্ষকরা।

সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, শুধু টাইলস নয় তার আবিষ্কৃত কাঁচামাল দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকনে তৈরি প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, টিন, টাইলস ও কার্বনের তৈরি মোটরযানের যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি বুলেট প্রুফ দরজা জানালাও তৈরী করা সম্ভব। তার আবিষ্কৃত কাঁচামালে ৬৫ শতাংশ কলাগাছের তন্তু ও ৩৫ শতাংশ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে। তার আবিস্কৃত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহজেই রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাধা করা য়ায়। আর সবজির শেতসার থেকে তৈরি পলিথিন মাটিতে ১ মাসে ও পানিতে ৩ মাসে পঁচে যাবে। যা মাটির জন্য হবে জৈব সার ও পানিতে হবে মৎস্য খাদ্য।

আরো পড়ুন  সরকারি লোগো লাগানো গাড়িতে ৭ লাখ ইয়াবা!

শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হৃদয় কুমার ভৌমিক জানান, তাদের কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল কলাগাছের সেলুলোজ সমৃদ্ধ তন্তু এর হাইডোঅক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে একটুকরো টাইলস তৈরি করে এবং আলুর শেতসার থেকে পলিথিন তৈরি করে এনে দেখায়। পরে আমরা সরকারী কলেজের ল্যাবে তাকে এটি করে দেখানোর আহ্বান জানালে, মঙ্গলবার কলেজের ল্যাবে এই দুই পণ্য তৈরি করে। এ সময় কলেজের অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তা দেখে। তিনি বলেন, সে যে কাঁচামাল ব্যবহার করেছে তা পরিবেশের ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরও অধিক গবেষণায় এটি ভালো কোন আবিস্কার হতে পারে।

কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রোমান মিয়া বলেন, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। আর তার আবিস্কৃত এ পলিথিন পরিবেশের উপর অপছনশীল পলিথিনের প্রভাব কমাবে।

সাজ্জাদুলের মাধ্যমিক বিদ্যালয় শ্রীমঙ্গল মহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান হুগলিয়া হাজী মনছব উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাছান জানান, ছোট বেলা থেকেই সাজ্জাদুলের বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কারে ছিল কৌতুহল। এ থেকেই বিভিন্ন কিছু আবিস্কারে তার মনোযোগ আসে। সাজ্জাদুল ইতোমধ্যে কলাগাছের তন্তুকে ব্যবহার করে তৈরি করেছে টাইলস আর অব্যবহৃত সবজীর শেতসার থেকে তৈরি করেছে পরিবেশ বান্ধব পলিথিন।

আরো পড়ুন  শেষ কর্মদিবসে বেআইনিভাবে দলিল রেজিস্ট্রি

শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক বিজন চন্দ্র দেবনাথ জানান, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। এতে পরিবেশের উপর অপছনশীল প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমবে।

সাজ্জাদুল ইসলাম জানায়, কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি এই কঠিন যৌগ তৈরি করতে তার সর্বোচ্চ ৬৫ ভাগ তন্তু দিলে এর মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ হবে। সে জানায়, তার তৈরি টাইলসের ওজন পায় ৩০০ গ্রাম। যার মধ্যে ২০০ গ্রাম কলাগাছের তন্তু ও হাইডোঅক্সাইড ৬০ গ্রাম ও রেজিন ৪০ গ্রাম। সে জানায় রেজিন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে যেন এটি না পঁচে এবং হাইডোঅক্সাইড রেজিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী অবস্থান প্রদান করে।

সাজ্জাদুলের বাবার নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি একজন কৃষক। সাজ্জাদুল শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের মহাজেরাবাদ গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন।

সর্বশেষ সংবাদ