30 C
Dhaka
Sunday, July 7, 2024

অবশেষে বেনজীরকে দুদকে তলব

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ৬ জুন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি যাতে হস্তান্তর না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর আদালতের জব্দের আদেশ পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া অপর এক নোটিশে বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদেরও আগামী ৯ জুন হাজির হতে বলেছে দুদক।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক আইজিপি তার আয়কর ফাইলে অনেক সম্পদ দেখালেও এসব সম্পদের বৈধ উৎস দেখবে দুদক। ট্যাক্স ফাইলে উঠালেও সম্পদ উপার্জনের বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে।

সূত্র জানায়, বেনজীরের স্ত্রী এবং সন্তানদের আয়ের খাত হিসেবে দেখিয়েছেন মাছের ব্যবসা। এটাও খতিয়ে দেখা হবে।

দুদক সূত্র আরও বলছে, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ দেশের বাইরে বেনজীর পরিবারের কোনো সম্পদ আছে কি না তা জানতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- বিএফআইইউতে চিঠি দিয়েছে দুদক।

সংস্থাটি বলছে, অনুসন্ধান শুরু করার পর থেকে প্রতিনিয়তই গোয়েন্দা মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বেনজীর পরিবারের সম্পদের বিস্তর তথ্য পাচ্ছে দুদক।

আরো পড়ুন  কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই: প্রধানমন্ত্রী

এর আগে গত ২৬ মে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের ১১৩টি দলিলের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া ঢাকায় ২০৪২ স্কয়ার ফিটের দুটি এবং ২০৫৩ স্কয়ার ফিটের দুটিসহ পৃথক চারটি ফ্লাট, শতভাগ মালিকানাধীন ৮টি কোম্পানি এবং আংশিক মালিকানা ১৫ টি কোম্পানিকে জব্দ করা হয়েছে।

তার আগে গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।

সেদিন আদালত সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জে বেনজিরের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি জব্দের আবেদন করে দুদক। এ সময় দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। পরে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

গত ২৩ এপ্রিল বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এ নির্দেশ দেন। পরে বেনজিরের সম্পদের খোঁজে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে।

সংস্থার উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

আরো পড়ুন  শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে বুদ্ধের শিক্ষা অনুসরণ করা প্রয়োজন : প্রধানমন্ত্রী

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত এক জাতীয় দৈনিকের দাবি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এরপর থেকেই বেশ আলোচনায় পুলিশের সাবেক এ আইজিপি।

জাতীয় ওই দৈনিকে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে তার নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র।

এ ছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৬টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। ৫টি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার।

পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।

আরো পড়ুন  অটোরিকশা আটকে পোশাককর্মীকে ধর্ষণ, চালকসহ গ্রেপ্তার ২

অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদের বেতনভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরি করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, যা তার আয়ের তুলনায় অসম।

বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে তার আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে চিঠিতে জানান ব্যারিস্টার সুমন।

এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ