যশোরে জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিনা যৌতুকে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে অর্ধশত তরুণ-তরুণীর। যাদের কাছে এ আয়োজন ছিলো স্বপ্নের মতো। তাদের সেই স্বপ্নই পূরণ করল শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন।
শনিবার (১৮ মে) দুপুর গাজীরদরগাহ কুয়েত ইসলামিক ইয়াতীম কমপ্লেক্সে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এতিম ও অস্বচ্ছল পরিবারের তরুণ-তরুণীরা। শুধু তাই নয়, বিয়েতে প্রত্যেক দম্পতি পেয়েছেন ঘর সাজানোর উপহার সামগ্রীও।
পাঞ্জাবি পায়জামা ও পাগড়ি আর লাল শাড়ি পরে অর্ধশত বর-কনে আসেন বিবাহস্থলে। ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনের পর নতুন বউ নিয়ে হাসিমুখে ফিরে যান নিজ নিজ বাড়িতে।
খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের কোনো কমতি ছিলো না এ বিয়েতে। নিজের বিয়ের এমন অনুষ্ঠানের স্বপ্ন দেখারও সাহস পায়নি তারা। তাই তাদের আনন্দের কমতি ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি জানান, কখনো স্বপ্ন ভাবিনি, আমাদের এমন আয়োজনে বিয়ে হবে। জেলা প্রশাসকসহ বিদেশি মেহমানরা আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যা দিয়েছেন আমরা তাতে সন্তুষ্ট।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর ও কনেদের পরিবারের সদস্যরা। তারাও এমন ধুমধাম বিয়ের আয়োজন কল্পনাও করেননি। তারা বলেন, আমরা হয়তো ছেলেমেয়েদের বড়জোর হুজুর ডেকে বিয়ে পড়াতে পারতাম। কিন্তু এ দাতা সংস্থা জাঁক জমকপূর্ণভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছে। বর-বউকে দামি কাপড়সহ বিয়ের সমস্ত কিছু দিয়েছে। আবার সংসার চালানোর জন্য ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। তাদের এমন উদ্যোগে আমরা খুবই আনন্দিত।
নতুন বর-কনে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পেল ঘর গোছানোর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
যশোরের কুয়েত ইসলামিক ইয়াতিম কমপ্লেক্সের পরিচালক মুফতি নাসিরুল্লাহ বলেন, খুলনা বিভাগের অসহায়, এতিম ও অর্থ সংকটে বিবাহ হচ্ছে না এমন ৫০ জোড়া পাত্র-পাত্রীকে বিবাহ দেয়া হয়েছে। একই সাথে কর্মসংস্থানের জন্য বরকে একটি করে ভ্যান গাড়ি ও কনেকে সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে। এক সাথে সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার উপস্থিত থেকে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, যৌতুকবিহীন বিবাহ প্রথা চালু করার উদ্দেশ্যে এমন আয়োজন করা হয়েছে। যেন যৌতুকের বলি হতে না হয় কোন নারীকে। পাশাপাশি গরিব অসহায় পরিবারগুলো ধুমধাম করে তাদের সন্তানদের বিয়ে দিতে পারে না, তাদের মনের আশা পূরণ করার বিষয়টিও আমাদের চিন্তায় ছিলো।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজ থেকে যৌতুক উচ্ছেদের সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করতে হবে। যৌতুকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে হবে। এমন আয়োজন সে বিষয়টিকে এগিয়ে নেবে।
তিনি যৌতুকমুক্ত সমাজ গঠনে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ আরো জোরদার করার আহ্বান জানান।