জমির বিরোধ, নারী নির্যাতনসহ বিচ্ছেদে দায়ের করা মামলায় যেখানে দীর্ঘ শুনানিতে অপেক্ষা করতে হয়, ঠিক সেখানে মামলার জট নিরসনে ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে লিগ্যাল এইডের বিচারক আবু সাঈদ। দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এক থেকে দেড় মাসে জটিল বিরোধ সহজেই করছেন নিষ্পত্তি।
লিগ্যাল এইড অফিস বলছে, গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে পঞ্চগড় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে যুক্ত হন বিচারক আবু সাঈদ। এর মাঝে গেল দেড় মাসে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ পেয়েছেন ১০৩ জন, আইনগত সহায়তা পেয়েছেন ৪৫ জন, মধ্যস্ততায় মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮০টি।
জানা গেছে, বিনামূল্যে সরকারি নির্ধারিত আইন সহায়তা সুবিধা পৌঁছে দিতে পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে সশরীরে গিয়ে হাজির হচ্ছেন পঞ্চগড় জেলার লিগ্যাল এইড অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী জজ আবু সাঈদ। তার মধ্যস্থতায় বিকল্প পদ্ধতিতে জমির বিরোধ কিংবা নারী নির্যাতনসহ বিচ্ছেদের বিরোধ সু-সম্পর্কে নিষ্পত্তি করে দিচ্ছেন। পাশপাশি জনসচেনতার লক্ষে বৈঠক করে যাচ্ছেন তিনি। একজন বিচারকের এমন জনকল্যাণমুখী বিচারিক সেবা দেয়ার মহানুভব উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের কাটনহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা একটি জমি সংক্রান্ত মামলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আদালতে ঘুরছি। কোনো সমাধান পাচ্ছিলাম না। এই বিচারক এখন মামলাটি পেয়ে নিজেই সরেজমিনে এসে তদন্ত করে যাচ্ছেন।’
স্থানীয় গোলাপ উদ্দীন ও দুলাল হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা কখনো শুনি নি যে, একজন বিচারক মামলা পেয়ে নিজেই ঘটনা জানতে ছুটে আসেন। আমাদের খুব ভালো লাগছে। আশা করি সঠিক সমাধান পাব।’
পঞ্চগড় সদরের জগদল বাজার এলাকার আলেমা খাতুন সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমার স্বামী আমার ওপর খুবই নির্যাতন করতো। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিকবার বসা হলেও সমাধান পাইনি। আমার স্বামী আমার ও সন্তানদের কোনো খবর নিচ্ছিল না। পরে আমি লিগ্যাল এইডে মামলা করলে বিচারক নিজেই তদন্ত সাপেক্ষে আমার সমস্যা সমাধান করে দিছেন।’
বিচারকের এমন ব্যাতিক্রমী উদ্যোগে সুফল পেয়ে খুশি বাদী-বিবাদীরা।
এদিকে, এ উদ্যোগে অন্য বিচারকের একাত্মতা ঘোষণার দাবি জানিয়ে শালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম ফরিদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘একজন দক্ষ বিচারক হিসেবে নিজেকে তিনি পরিচয় দিয়েছেন। খুব ভালো বিষয় এটি, কারণ আমরা দেখেছি একাবার মামলা হলে তার শেষ হওয়ার কোনো খবর থাকে না। এই বিচারককে ধন্যবাদ জানাই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য। এখন যদি অন্য বিচারকেরাও এই উদ্যোগে এগিয়ে আসে তবে, আদালত ও আইনের প্রতি মানুষের আস্থা আরো কয়েকগুণ বাড়বে।’
জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী আবুল হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, ‘আবু সাঈদ স্যার নিজের কাজগুলো খুব সুন্দরভাবে করছেন। আমি মনে করি এমন কার্যক্রম মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কাটানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের আইন সহায়তা পৌঁছে যাচ্ছে।’
পঞ্চগড় জেলা লিগ্যাল এইড অফিকের সিনিয়র সহকারী জজ আবু সাঈদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘সরকারের দেয়া এই সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে অভিযোগ বা মামলা পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। এদিকে সরকারি ফ্রি এই সেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচারণাও চালাচ্ছি।’