যেকোনো ট্র্যাজেডির প্রেক্ষিতে মানব হৃদয় প্রায়ই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। ইয়াসু তাকামাতসু সেসব ভালো করেই জানেন। এখন থেকে ১৩ বছর আগে ২০১১ সালের বিধ্বংসী সুনামির সময় নিজের প্রিয় স্ত্রী ইয়োকোকে হারিয়েছিলেন তাকামাতসু।
এরপর অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু স্ত্রীকে খুঁজে পাননি তিনি। তবে আজও আশা ছাড়েননি। আজও খুঁজে চলেছেন। তাকামাতসুর অটল ভালবাসার অসাধারণ এই গল্প ‘দ্য ডাইভার’ শিরোনামের একটি মর্মস্পর্শী ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে।
এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকরা নিখোঁজ স্ত্রীকে খুঁজে বের করার জন্য তাকামাতসুর নিরলস অনুসন্ধান সম্পর্কে জানার সুযোগ লাভ করছে।
তাকামাতসু স্ত্রী ইয়োকোকে নিয়ে জাপানের মিয়াগি প্রদেশের ওনাগাওয়া শহরে বাস করতেন। ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের মূল ভূখণ্ডে প্রলয়ঙ্কর সুনামি আঘাত হানে। এতে দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলের বড় অংশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মারা যান হাজারো মানুষ। নিখোঁজ হন অনেকে। ইয়োকোও তাদের অন্যতম।
সুনামির কয়েক মাস পর স্ত্রীর মোবাইল ফোন তার কর্মস্থলের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে পান তাকামাতসু। তাতে একটা খুদে বার্তা লেখা ছিল। বার্তায় লেখা ছিল, ‘অনেক বড় সুনামি।’
তাকামাতসু তার প্রিয় স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়ার আশায় ওনাগাওয়ার তীর, সমুদ্র সৈকত, বন ও পাহাড়ের পাদদেশে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করেন। প্রথাগত অনুসন্ধান প্রচেষ্টায় যখন কোনো ফল পাওয়া যায়নি, তখন তিনি সমুদ্রের দিকে মনোযোগ দেন।
ইয়োকোকে খোঁজার জন্য ৫৬ বছর বয়সে স্কুবা ডাইভিং শেখার সিদ্ধান্ত নেন তাকামাতসু। দুই বছর পর ২০১৩ সালে সাগরে নামেন তিনি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০০ বার সাগরে নেমেছেন। কিন্তু আজও স্ত্রীর সন্ধান মেলেনি।
তবে ইয়োকোর জন্য অক্ষয় ভালোবাসা তাকামাতসুকে এতটুকু হতোদ্যম করতে পারেনি। তার বিশ্বাস, একদিন না একদিন তাকে খুঁজে পাবেন তিনি।
ইয়োকোর সাথে তাকামাতসুর প্রথম দেখা হয় ১৯৮৮ সালে। তখন ইয়োকো ২৫ বছরের তরুণী। কাজ করতেন ওনাগাওয়ার সেভেনটি সেভেন ব্যাংকে।
অন্যদিকে তাকামাতসু ছিলেন জাপানের ‘গ্রাউন্ড সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সে’র একজন সেনা। ইয়োকোর সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেন ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।
প্রথম দেখাতেই একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেন ইয়োকো ও তাকামাতসু। এরপর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাকামাতসু তার স্ত্রীর ব্যাপারে বলেন, ‘ও ছিল ভদ্র। আমি তার হাসি ও বিনয়ী স্বভাব পছন্দ করতাম।’
সুনামিতে ভেসে যাওয়া কাউকে খুঁজে পাওয়া অনেকটা অসম্ভবই। এমন দুঃসাধ্য কাজ চালিয়ে যেতে অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করেছেন।
কিন্তু তাকামাতসু নাছোড়বান্দা। তিনি বলেন, ‘৫৬ বছর বয়সে আমি ডাইভিং শিখেছি এ কারণে যে আমি সাগর থেকে আমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করে আনতে চাই।’ সূত্র: গাল্ফ নিউজ।